ইসলামি শরিয়তে মুসাফির ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, যে ৪৮ মাইল তথা (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ত্যাগ করে। আর যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছে বা ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফর করেছে সে মুকিম।
তেমনিভবে ৭৮ কিলোমিটার কিংবা তারচেয়ে বেশি দূরত্বে সফর করলে পথিমধ্যে মুসাফির হলেও কোনো এক গ্রাম বা এক শহরে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময় অবস্থানের নিয়ত করলে ওই স্থানে সে মুকিম হবে।
যে ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে মুকিম সে ঢাকার কোনো এলাকা থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে ঢাকা সিটির সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে এবং পথিমধ্যে মুসাফির ইমামের পেছনে বা একাকী নামাজ পড়লে কসর করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে। আর মুকিমের পেছনে পড়লে পুরো চার রাকাত পড়তে হবে।
গন্তব্যস্থলে পৌঁছে কোনো এক গ্রাম নির্দিষ্ট না করে একাধিক গ্রামের মসজিদে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে গন্তব্যস্থলেও সে মুসাফির গণ্য হবে। তদ্রূপ শহর ও শহরতলী মিলে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলেও মুসাফির থাকবে।
একটি গ্রাম বা একটি শহরের বিভিন্ন মসজিদে এক নাগাড়ে ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করলে ওই গ্রাম বা শহরে সে মুকিম গণ্য হবে। কিন্তু এক গ্রাম বা এক শহর না হয়ে পুরো জেলা বা উপজেলায় কিংবা ভিন্ন ভিন্ন একাধিক গ্রাম বিশিষ্ট ইউনিয়নে, ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকিম হবে না; বরং মুসাফিরই থাকবে।
এক গ্রাম বা এক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ওই গ্রাম বা শহরেও সে মুসাফির গণ্য হবে। মুকিম ব্যক্তি ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফরের জন্য বের হলে পথিমধ্যে এবং গন্তব্যস্থলে মুকিম গণ্য হবে।
সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাসিন্দা নিজ গ্রামের সীমানা ত্যাগ করার পর এবং শহরের বাসিন্দা শহরের সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে কসর শুরু করবে। আর সফর থেকে ফেরার পথে নিজ গ্রাম বা শহরের সীমানায় প্রবেশ করার পর মুকিম হয়ে যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ১/২৬১, ২৬৮-২৭০
সফর অবস্থায় নামাজ কসর (সংক্ষিপ্ত) করা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এ সব হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সর্বদা নামাজ কসর পড়েছেন।
আর মাগরিব, বেতর ও ফজরের নামাজ পূর্ণই আদায় করতে হবে। এগুলোর কসর নেই। তেমনিভাবে সুন্নত নামাজের কসর হয় না। তাই সুন্নত পড়লে পুরোই পড়বে। তবে সফর অবস্থায় পথিমধ্যে তাড়াহুড়া ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর গন্তব্যে পৌঁছার পর সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম।
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সফর অবস্থায় সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজগুলো মুকিম অবস্থার ন্যায় আবশ্যক থাকে না; বরং সাধারণ সুন্নতের হুকুমে হয়ে যায়।
আকাশ পথে সফরের ক্ষেত্রেও দূরত্বের হিসাব স্থলভাগে সফরের দূরত্বের পরিমাপে হবে, অর্থাৎ স্থলভাগের ৭৮ কিলোমিটার পরিমাণ দূরত্বের সফর হলে আকাশপথে মুসাফির হবে। অনুরূপ পার্বত্য এলাকায় সফরের ক্ষেত্রেও সমতলে চলার হিসেবেই হবে, অর্থাৎ পাহাড়ের উঁচু-নীচু ঢালুসহ দূরত্বের হিসাব হবে। -ফাতহুল কাদির: ২/৩১
মুসাফির ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত সফর অবস্থায় চার রাকাত নামাজ পূর্ণ করলে গোনাহ হবে। এ ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়া ওয়াজিব। আর যদি ভুলক্রমে চার রাকাত পূর্ণ করে নেয়, তাহলে যদি সে প্রথম বৈঠক করে থাকে, তাহলে সেজদা সাহু করে নিলে ফরজ নামাজ আদায় হয়ে যাবে, আর যদি প্রথম বৈঠক না করে থাকে তাহলে ফরজ আদায় হবে না, আবারও পড়তে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ১/৯১
মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণে পূর্ণ নামাজই আদায় করবে।
মুকিম ব্যক্তি মুসাফির ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজগুলোতে মুসাফির ইমাম সাহেব দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরানোর পর মুকিম মুক্তাদি দাঁড়িয়ে সূরা পড়া ছাড়া বাকি দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।
সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া নামাজ মুকিম অবস্থায় কাজা করলে ‘কসর’ই আদায় করবে, আর মুকিম অবস্থার ছুটে যাওয়া নামাজ সফরে কাজা করলে তা পূর্ণ আদায় করবে।