আল্লাহতায়ালার অগণিত কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে ভাষা অন্যতম। আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূলকে আসমানি কিতাবসহ স্বজাতির ভাষায় পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। যেমন হজরত দাউদকে (আ.) তার নিজ ভাষা গ্রিকে যাবুর কিতাব নাজিল করেছেন। হজরত মূসাকে (আ.) তাওরাত হিব্রু ভাষায়, হজরত ঈসাকে (আ.) ইঞ্জিল সুরিয়ানি ভাষায়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআনে কারিম নাজিল করেছেন আরবের ভাষা আরবিতে।
ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি যথার্থ গুরুত্ব দিয়ে মায়ের ভাষাকে মর্যাদার উচ্চমানে সমাসীন করেছে। ইবনে ফারিছ আল লুবাবির মতে আল্লাহতায়ালা স্বয়ং ভাষা শিখিয়েছেন। তিনি সর্বপ্রথম আমাদের আদি পিতা হজরত আদমকে (আ.) ভাষা শিক্ষা দেন। তা থেকে তার সন্তানরা ভাষা শিক্ষা লাভ করেছে।
এ সম্পর্কে কোরআন কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনি আদমকে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছিলেন। -সূরা বাকারা: ৩২
ভাষা সম্পর্কে কোরআন কারিমে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, দয়াময় আল্লাহ, শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। সৃজন করেছেন মানুষ। শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা। -সূরা রাহমান: ১-৪
কোরআনে কারিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তার আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। -সূরা রুম: ২২
স্বজাতির ভাষা ছাড়া আমি কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি যাতে সে তাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারে। -সূরা ইবরাহিম: ৪
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ করেন, আমি প্রত্যেক নবীকে (আ.) তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি তাদের সম্প্রদায়ের নিকট, যাতে তারা জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় বোঝাতে সক্ষম হন। -সূরা মারইয়াম: ৯৭
কোরআনে কারিমে আরও বর্ণনা করা হয়েছে, আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। যাতে তোমরা বুঝতে পারো। -সূরা ইউসূফ: ২
ইসলামি সাহিত্যের দিকপাল মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) বলেন, মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা করা জাতি হত্যারই নামান্তর। বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিখ্যাত মনীষী আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ শতাংশ মানুষ মুসলমান এবং দেশের ভাষাও বাংলা। অতএব আলেমসমাজকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান (পাণ্ডিত্য) অর্জন করতে হবে।
বিশ্ববিখ্যাত ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে খালেদুন বাংলা ভাষা সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক শিক্ষাই তার মাতৃভাষায় হওয়া চাই, কেননা অপরিচিত ভাষার মাধ্যমেই শিক্ষা দান ও অর্জন অসম্পূর্ণ শিক্ষারই নামান্তর। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও মাতৃভাষায় অনেক গুরুত্ব রয়েছে। ইসলাম প্রচার-প্রসার, দ্বীন ও জাতির খেদমতের উদ্দেশ্যে ভাষা চর্চা করাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। সে হিসেবে প্রত্যেক মুসলমান, বিশেষ করে আলেম-উলামাদের কর্তব্য হলো মাতৃভাষা চর্চায় মনোযোগী হওয়া।
লেখক: প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার