সুন্নত নামাজ দুই প্রকার। এক. সুন্নতে মোয়াক্কাদা, দুই. সুন্নতে জায়েদা। সুন্নতে জায়েদা ছেড়ে দিলে গোনাহ হয় না, এটি মোস্তাহাবের মতো। পড়লে সওয়াব, না পড়লে গোনাহ নেই। যেমন আসরের আগের চার রাকাত সুন্নত।
সুন্নতে মোয়াক্কাদা অর্থ যেসব সুন্নত নামাজ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই ছাড়েননি। এর মর্যাদা প্রায় ওয়াজিবের মতো, যা ছাড়লে গোনাহ হয়।
নবী করিম (সা.) এসব নামাজ এত গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতেন। এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্তের সুন্নতে মোয়াক্কাদাগুলো নিয়মিত আদায় করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা কেবল তার মৃত্যু।
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়ি থেকে শুরু করে পীর-বুজুর্গরা এসব সুন্নত নিয়মিত পড়তেন। তবে কোনো কারণবশত মাঝে মধ্যে এসব সুন্নত ছুটে গেলে কাজা করতে হয় না। কঠিন কোনো গোনাহও হয় না। কিন্তু পড়ার মধ্যে ফজিলত রয়েছে।
ফজরের সুন্নত
সুন্নত নামাজের মধ্যে ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিয়ো না, যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়। -মুসনাদে আহমদ: ৯২৫৩
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিদের থেকে বর্ণিত আছে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন হজরত আবু দারদা (রা.) ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। তারপর জামাতে শরিক হতেন। -শরহু মায়ানিল আছার, তহাবি: ১/২৫৬
সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সঙ্গে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিতে হবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত আদায় করে নেবে।
অবশ্য কোনো কোনো ইসলামি স্কলার (ফকিহ) সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামি স্কলারের অভিমত তা-ই, যা ওপরে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো হলো-
এক. জামাতের কাতারের সঙ্গে মিলিত হয়ে নামাজ পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো খুঁটির আড়ালে সুন্নত পড়বে।
দুই. জামাত থেকে পেছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে। -সূত্র: আল জামিউস সগির: ৯০
সফর অবস্থায় সুন্নত
আর সফর অবস্থায় সুন্নত নামাজ পড়া-না পড়ার ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম এবং সাহাবাদের দুই ধরনের আমল বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় সুন্নত পড়ার কথা এসেছে। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় সুন্নত না পড়ার কথাও এসেছে।
তবে ফজরের সুন্নতের ব্যাপারে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্থ-অসুস্থ, মুসাফির-মুকিম কোনো অবস্থাতেই তা ছাড়তেন না। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৩৯৫০
অতএব সফর অবস্থায় ফজরের সুন্নত গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অন্য ওয়াক্তের সুন্নতের ক্ষেত্রে হুকুম হলো, যাত্রাপথে তাড়াহুড়ো ও ব্যস্ততার সময় সুন্নত পড়বে না। আর যদি যাত্রাপথে তাড়াহুড়ো ও ব্যস্ততা না থাকে এবং সুন্নত পড়ার অবকাশ থাকে তাহলে সম্ভব হলে পড়ে নেবে। আর গন্তব্যস্থলে নিরাপদে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে সুন্নত পড়ে নেওয়াই উত্তম। এক্ষেত্রে সুন্নত ছাড়বে না।
সফর অবস্থায় চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ দুই রাকাত পড়ার বিধান কেবল ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সুন্নত নামাজের কোনো কসর নেই। তাই সফর অবস্থায় সুন্নত পড়লে পূর্ণ চার রাকাতই পড়তে হবে। -জামে তিরমিজি: ৫৫০