কালিমায় বিশ্বাস তথা ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। নামাজ পরিত্যাগ করা কুফুরি পর্যায়ের গোনাহ। এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও তাগিদ এসেছে, যা অন্যকোনো বিষয়ে আসেনি।
নামাজের এত গুরুত্ব হলেও বাস্তবতা হলো- একমাত্র আল্লাহভীরুদের জন্য ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা খুব কঠিন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধৈর্য্যের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করো নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু আল্লাহভীরু লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। -সূরা বাকারা: ৪৫
নামাজে অবহেলার পরিণতি: নামাজে অলসতা ও অবহেলার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই সব নামাজিদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি যারা নামাজ থেকে উদাসীন।’ -সূরা মাঊন: ৪-৫
এ আয়াতের তাফসিরে সাহাবি হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কারা যাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি? তিনি বললেন, ‘যারা নামাজের নির্দিষ্ট সময় পার করে দিয়ে নামাজ আদায় করে।’
মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য: নামাযে অলসতা করা মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য। ইরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত অলসভঙ্গিতে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ -সূরা নিসা: ১৪২
এ ছাড়া অন্য অনেক হাদিসে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করে নামাজ আদায়কারীকে মুনাফেক বলা হয়েছে।
নামাজ অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল: সময়মতো নামাজ আদায় করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা।
বর্ণিত এসব আয়াত ও হাদিস থেকে যথাসময়ে নামাজ আদায় করার গুরুত্ব এবং তা আদায়ের ক্ষেত্রে অলসতা ও ঢিলেমি করার ভয়াবহতা সুষ্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নে নামাজে অলসতা দূর করার কিছু উপায় উপস্থাপন করা হলো-
এক. যথাসময়ে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা স্মরণ করা।
দুই. নামাজে অবহেলা প্রদর্শনের ভয়াবহতার কথা মনে জাগ্রত করা। এ দু’টি বিষয়ে কোরআনের আয়াত ও হাদিস সম্বলিত ভালো মানের বই কিংবা আর্টিকেল পাঠ করা উচিৎ। বিষয়গুলো জানা থাকলেও আবার পড়ুন। তাতে মনের মধ্যে নতুনভাবে অনুপ্রেরণা আসবে।
তিন. মনে মৃত্যুর কথা জাগ্রত রাখা। যেকোনো সময় মৃত্যু ঘটতে পারে এটা ভাবা। সুতরাং সময় হওয়ার পরও যদি নামাজ আদায়ে বিলম্ব করি আর আমার যদি মৃত্যু সংঘটিত হয়, তাহলে অলসতাবশত: কাজা নামাজের দায়ভার মাথায় নিয়ে আল্লাহতায়ালার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
চার. অলসতা দূর করার জন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি দোয়া করা।
পাঁচ. যথাসময়ে নামাজ আদায়ের জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা বাস্তবায়নে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। কেউ যদি ভালো কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহতায়ালা তাকে অবশ্যই তাতে সাহায্য করেন।
ছয়. আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করা এবং পাপকাজ পরিত্যাগ করা। কারণ মানুষের পাপের সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে তার অন্তরে প্রলেপ পড়ে যায়। তখন সে ধীরে ধীরে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরে যায়। সে আর আগের মতো ইবাদতের স্বাদ অনুভব করে না। যার কারণে অন্তরে ইবাদতে আড়ষ্টতা, অবহেলা ভাব ও অলসতা অনুভব করে।
সাত. নামাজে বিলম্ব হলে নিজেকে ধিক্কার দেওয়া এবং ভবিষ্যতে যেন আর তা না হয় সে জন্য মনকে প্রস্তুত করা।
আট. সবসময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা। অজু ভেঙ্গে গেলে আবার অজু করে নিন। তাহলে এটি সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে- ইনশাআল্লাহ।
নয়. দৈনন্দিন কিছু কাজ নামাজের ওপর ভিত্তি করে সাজিয়ে নেওয়া। যেমন- এ কাজটি নামাজে আগে করবেন আর এ কাজটি নামাজে পরে করবেন; এভাবে সাজানো।
দশ. মনকে সময়মতো নামাজ পড়তে বাধ্য করা। কারণ আমরা যদি মনমতো চলি তাহলে আমরা সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হবো। তাই মনকে কখনও কখনও কাজে বাধ্য করতে হয়। অর্থাৎ ইচ্ছা না করলেও করতে হয়। সুতরাং আপনি যদি কিছুদিন মনের মধ্যে অলসতাতে প্রশ্রয় না দিয়ে মনকে সঠিক সময় নামাজ আদায় করতে বাধ্য করেন তাহলে অল্পদিন পর এর ফলাফল পাওয়া শুরু করবেন। তখন মনের মধ্যে অলসতা আশ্রয় পাবে না- ইনশাআল্লাহ।
এগারো. যে বিষয়গুলো নামাজে অলসতা তৈরি করে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। বর্তমানে অলস সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে আছে, সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও টেলিভিশন। তাই এসব থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও দূরে থাকতে হবে। তাহলে কাজে মন বসবে, ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং অলসতা হার মানবে।
বারো. অতিরিক্ত ঘুম ও খাওয়া মনকে অলস এবং শরীরকে স্থূল করে দেয়। সুতরাং এ দু’টি বিষয় যেন অতিরিক্ত না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকা। বরং পরিমিত পরিমাণ খাওয়া ও পরিমিত ঘুম, হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস মানুষকে সচল রাখে এবং অলসতা ও স্থবিরতা দূর করে। এগুলো মেনে চলা।