অর্থই সব অনর্থের মূল। ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ নিয়ে কারবার। একটু অসৎ হলে নগদ টাকা হাতে এসে যায় এ অর্থের লোভ ত্যাগ করা অনেক কষ্টকর। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীরা পাপী হিসেবে কিয়ামত দিবসে উঠবে, কিন্তু যারা আল্লাহকে ভয় করেছে, সৎ ও সত্যবাদী হিসেবে ব্যবসা করেছে তারা ব্যতীত।’ –সুনানে তিরমিজি
রমজান মাস আসে পরকালীন লাভের পাল্লা ভারী করতে। কিন্তু পরকাল বিমুখ, লোভী কিছু লোক রমজান মাসকে উপলক্ষ করে দুনিয়ার লাভের পাল্লা ভারী করার চেষ্টায় তৎপর হয়। পণ্য মজুদদারী, অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি করা, খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি, মধ্যসত্ত্ব ভোগী তৎপরতা ইত্যাদি এ সময় বৃদ্ধি পায়।
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ক্রয়-বিক্রয় তথা ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে রয়েছে ইসলামি বিধান। যেমন কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইনসাফ মোতাবেক যথাযথভাবে ওজন করো এবং ওজনে কম দিও না।’ -সূরা রহমান: ৯
কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে জাতি! তোমরা পরিমাপ ও ওজন পরিপূর্ণভাবে ন্যায়সংগতভাবে কর, মানুষকে তাদের জিনিসপত্র কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করো না, পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিও না।’ –সূরা হুদ: ৮৫
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসে ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা বর্ণিত রয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত একবার নবী (সা.) বিক্রির জন্য রাখা এক স্তুপ (খেজুর) খাদ্যের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন যেগুলো সুন্দরভাবে সাজানো ছিল। নবী করিম (সা.)-এর (স্তুপের) ভেতর হাত প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভেতরে ভেজা। নবী করিম (সা.) বিক্রেতাকে বললেন এরুপ কেন হলো? বিক্রেতা বলল বৃষ্টি হয়েছিল তাই। তিনি বললেন, ভেজাগুলো ওপরে রাখলেনা কেন? যেন মানুষ তা দেখতে পারে। যে ধোঁকা দেয় সে আমার উন্মত নয়। -সহিহ মুসলিম
নবী করিম (সা.) বলেন, তিন শ্রেণির লোকদের সঙ্গে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র (ক্ষমা) করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, হজরত আবু যর (রা.) বললেন, সে ক্ষতিগ্রস্থ শ্রেণি কারা? নবী করিম (সা.) বললেন, টাখনুর নিছে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ, উপকার করে খোটা দানকারী, মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রয়কারী। -সহিহ মুসলিম
নবী করিম (সা.) বলেছেন, সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিবসে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবেন। -তিরমিজি
বর্ণিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোকে আমাদের ব্যবসায়িক জীবন পরিচালনা করা উচিৎ। দুনিয়ার অস্থায়ী জীবনের সামান্য সময়ের অর্থ সম্পদ লাভের তুলনায় পরকালের পাথেয় সংগ্রহকে বেশি গুরুত্ব প্রদান প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। কিন্তু আমাদের দেশে রমজান মাসে, কোরবানির ঈদের সব ধরনের পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়, এ জন্য গুদামজাত থেকে শুরু করে যা যা করা দরকার; তার সবই করেন।
মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে সৌদি আরব, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে রমজানে ব্যবসায়ীরা লাভের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে রমজানে দ্রব্যমূল্য কম থাকে। যে পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য আমরা অসৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছি। পরিবারের কোনো সদস্য কি আমার পাপের দায়ভার নেবে? অসৎ ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পদের যে পাহাড় গড়ছি সে সম্পদ মৃত্যুর সময় আমার সংগী হবে বা আমার আদৌ কোনো উপকারে আসবে? ফরমালিন বা কেমিক্যাল ব্যবহারে মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে কষ্ট পেলে বা মৃত্যুবরণ করলে ফরমালিন, কেমিক্যাল মিশ্রণকারী হত্যাকারী হিসেবে অপরাধী হবে।
আল্লাহ পাক সবাইকে ইসলামি নির্দেশনা মেনে সততার সঙ্গে ব্যবসা করার তাওফিক দিন। অসৎ ব্যবসায়ের মহাপাপে পাপী হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমিন।