কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ কাজকে সেই নেকি দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভালো। তাহলে দেখবে যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা ছিলো, সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে।’ -সূরা হা-মিম আস সেজদা: ৩৪
বিশ্ব মুসলিমদের মাঝে অশান্তির প্রধান কারণ হলো, তারা আজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শতধাবিভক্ত হয়ে গেছে। হোক তাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বা হোক তা ধর্মীয়। আল্লাহতায়ালার ভয় ও আখেরাতে কড়ায় গণ্ডায় হিসাব দিতে হবে সে ভয়ও তাদেরকে বিচলিত করে না। অথচ স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সা.) এ হিসাবের ভয়েও বিচলিত হতেন। তিনি হজরত আয়েশা (রা.) কে নামাজে এ দোয়া করতে শিখিয়েছেন, ‘আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাই ইয়াসিরা।’ হে আল্লাহ! আমার হিসাব নিও সহজ করে।
সমাজে অনকে লোক আছেন, যারা মন্দের মোকাবেলায় একই মন্দ বা অন্য কোনো মন্দ কাজ দিয়ে করে না। বরং মন্দের মোকাবেলা ভালো কোনো কাজের মাধ্যমে করে। অন্যায়কে প্রতিহত করার জন্য অন্যায়ের সাহায্য গ্রহণ না করে ন্যায়ের সাহায্য গ্রহণ করে। কেউ তাদের প্রতি যতই জুলুম করুক না কেন, তার জবাবে তারা পাল্টা জুলুম করে না বরং ইনসাফ করে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে যতই মিথ্যাচার করুক না কেন, জবাবে তারা পাল্টা সত্যই বলে। কেউ তাদের সঙ্গে যতই বিশ্বাস ভঙ্গ করুক না কেন, জবাবে তারা বিশ্বস্ত আচরণ করে থাকে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি এ অর্থই প্রকাশ করে- ‘তোমরা নিজেদের কার্যধারাকে অন্যের কর্মধারার অনুসারী করো না। এ কথা বলা ঠিক নয় যে, লোকেরা ভালো করলে আমরা ভালো করব এবং লোকেরা জুলুম করলে আমরাও জুলুম করব। তোমরা নিজেদেরকে একটি নিয়মের অধীন করো। যদি লোকেরা সদাচরণ করে তোমরাও সদাচরণ করো। আর যদি লোকেরা তোমাদের প্রতি অসৎ আচরণ করে, তাহলে তোমরা জুলুম করো না।’
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আরেকটি হাদিস একই অর্থ প্রকাশ করে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আমাকে ৯টি কাজের হুকুম দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি এ চারটি কথা বলেছেন- কারো প্রতি সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট যাই থাকি না কেন, সর্বাবস্থায় আমি যেন ইনসাফের কথা বলি। যে আমার অধিকার হরণ করে, আমি যেন তার অধিকার আদায় করি। যে আমাকে বঞ্চিত করবে, আমি যেন তাকে দান করি। আর যে আমার প্রতি জুলুম করবে, আমি যেন তাকে মাফ করি।
একই অর্থ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত হাদিসটিও। এই হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে তোমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তুমি তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না।’
এমন ভাগ্যবানদের প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারও ভাগ্যে জোটে না এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না।’ -সূরা হা মিম আস সেজদা: ৩৫
অসৎ কর্ম বা দুষ্কর্মকে সৎকর্ম দ্বারা মোকাবেলা করা কোনো ছেলেখেলা নয়। এ জন্য দরকার সাহসী লোকের। এ জন্য দরকার দৃঢ় সঙ্কল্প, সাহস, অপরিসীম সহনশীলতা এবং চরম আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। কেবল সেই ব্যক্তিই এ কাজ করতে পারে, যে বোঝে শোনে ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত করার জন্য কাজ করার দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করেছে, যে তার প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচারশক্তির অনুগত করে নিয়েছে এবং যার মধ্যে নেকি ও সততা এমন গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছে যে, বিরোধীদের কোনো অপকর্ম ও নোংরামি তাকে তার উচ্চাসন থেকে নামিয়ে আনতে সফল হতে পারে না। অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার মানুষই কেবল এসব গুণের অধিকারী হয়ে থাকে।
আর যে ব্যক্তি এসব গুণের অধিকারী হয়, দুনিয়ার কোনো শক্তিই তাকে সাফল্যের মনজিলে মকসুদে পৌঁছা থেকে বিরত রাখতে পারে না। নীচু প্রকৃতির মানুষ তাদের হীন চক্রান্ত জঘন্য কৌশল এবং কুৎসিৎ আচরণ দ্বারা তাকে পরাস্ত করবে তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এ ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে আখেরাতে কী ধরনের আচরণ করা হবে নিম্নোক্ত আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘আখেরাতের ঘর হচ্ছে তাদের জন্যই। তারা নিজেরা এতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সঙ্গে বাপ-দাদারা ও স্ত্রী-সন্তানদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্মশীল হবে তারাও তাদের সঙ্গে সেখানে থাকবে। ফেরেশতারা সবদিক থেকে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আসবে এবং বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি। তোমরা দুনিয়ায় যেভাবে সবর করে এসেছ তার বিনিময়ে তোমরা এর অধিকারী হয়েছে।’
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা আত্মসংযমী তাদের বিনা হিসাবে প্রতিদান দেওয়া হবে।’