বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে লাল- সবুজের পতাকাকে বিশ্বের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের হাফেজ তরিকুল ইসলাম, সাইফুর রহমান ত্বকি, দৃষ্টিবন্ধি হাফেজ হাফেজ তানভীর হোসাইন, সাআদ সুরাইল, বশির আহমাদ, আবু রাহাত, আবু তালহা ও ফয়সাল আহমাদসহ অনেকেই।
এ সব বিশ্বজয়ী হাফেজ গড়ার সফল কারিগর, বাংলাদেশের সবচেয়ে ও একাধিবার আন্তর্জাতিক সনদ এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বসেরা হেফজ প্রতিষ্ঠান মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল শায়খ নেছার আহমাদ আন নাছিরী এবার এক বিরল সন্মানা পেলেন ইলমের কাবাখ্যাত বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসরে।
সম্প্রতি মিসরের নাসের সিটির তাওফিকিয়ার এক হলরুমে রেওয়ায়েতে আসেমের (কোরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি বিশেষ) ওপর শুবা ও হাফস শেষ করার এক বিরল সন্মানা সনদ শায়খ নেছার আহমাদ আন নাছিরীর হাতে তুলে দেন মিসরের বিশ্ববিখ্যাত কারি শায়খ আহমাদ-আহমাদ নাঈনা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মিসরের কারি শায়খ মুহাম্মদ আল মুরিজী, শায়খ আবদুল ফাত্তাহ, শায়খ আবদুল লাতিফ ওহদান, শায়খ সাঈদ আর-রাশেদ এবং আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার বাংলাদেশি বিচারক শায়খ শুয়াইব মুহাম্মদ আল আজহারী ও মাওলানা মুহিব্বুর রহমান আল আজহারী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মিসরের আল আজহারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা।
মুত্তাসিল সনদ পাওয়া প্রসঙ্গে শায়খ নেছার আহমাদ আন-নাছিরী বলেন, মিসরের বিশ্ববিখ্যাত কারিরা আমাকে মুত্তাসিল সনদ প্রদান করেছেন। এই মুত্তাসিল সনদ গ্রহণ করার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাকে ইলমের কাবাখ্যাত মিসরে আরও একটি স্বপ্নপূরণ করার তাওফিক দিলেন, আল্লাহতায়ালা যেন বাকি রেওয়ায়েতগুলো শেষ করার তাওফিক দান করেন এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন কোরআনের ছাত্র হিসেবে আমাকে কবুল করে নেন, আমি কোরআনের উসিলায় সবকিছু পেয়েছি, কোরআনের জন্যই জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করতে চাই, মিসরে আছি দীর্ঘ দিন যাবত শুধুই কোরআনে কারিমের ভালোবাসায়।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন যাবত মিসরে অবস্থান করায় বাংলাদেশকে অনেক বেশি মিস করছি, জানি না বাংলাদেশ কেমন আছে, আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ করি আল্লাহ যেন বাংলাদেশকে হেফাজত করেন। এবারের রমজান, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা নিজের পরিবার মা-বাবা ও আত্বীয়-স্বজন ছাড়াই কাটাতে হলো শুধুই কোরআনের ভালোবাসায়। এর আগেও একাধিকবার দীর্ঘ সময় কোরআনের রেওয়ায়েত শেখার নেশায় অতিবাহিত করেও শেষ করতে পারছিলাম না, বাংলাদেশে আমার অনেকগুলো মাদ্রাসা রয়েছে, সেগুলোর হাজারও শিক্ষার্থী আর শত শত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি পরিচালনাসহ নানাবিধ কাজে থেকে সময় বের করা যে কত কঠিন সেটা মাদ্রাসার পরিচালকরাই ভালো করে অনুভব করেন।
তিনি আরও বলেন, রেওয়ায়েত শুরু করার সময় অনেকেই বলেছেন আমার ছাত্ররা সারাবিশ্বে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়, আমার এই রেওয়ায়েত শেখার কি প্রয়োজন? আর বাংলাদেশেও রেওয়াতের প্রচলন নেই বললেই চলে। আলহামদুলিল্লাহ আমি সবকিছু উপেক্ষা করে ইলমের কাবাখ্যাত মিসরে শুবা এবং হাফস শেষ করে অনুমতি গ্রহণ করার তাওফিক আল্লাহতায়ালা দান করেছেন।
ইলমের কাবাখ্যাত মিসরে শায়খ ফারাবি বাগদাদ থেকে ১০ দিনের সফরে মিসর এসে দীর্ঘ বছর থাকার ইতিহাস শুনেছি। আমিও কোরআনের নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে প্রিয় মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে, নিজের রক্ত পানি করা একাধিক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রেখে ভিন্নদেশে পরে আছি।
উল্লেখ্য, শায়খ নেছার আহমাদ আন নাছিরীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় চিলোকুট ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসায়। তিনি হেফজ সমাপ্ত করে আড়াইসিধা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল সমাপ্ত করার পর দীর্ঘ দিন কোরআন মাজিদের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। তিনি বাংলাদেশের মাটিতে ১৫টি আন্তর্জাতিক হেফজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই মাদ্রাসার ছাত্ররা বিশ্বের মাঝে বারবার কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে উচ্চশিখরে নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কোরআনে কারিমের উচ্চতর শিক্ষার জন্য মিসর আছেন এবং ইতোমধ্যেই ইমাম আসেমের ওপরে রেওয়ায়েতে শুবা এবং হাফসের ওপরে মুত্তাসিল সনদ মিসরের বিশ্ববিখ্যাত কারিদের হাত থেকে গ্রহণ করেন।
শায়খ নেছার আহমাদ আন নাছিরীর গ্রামের বাড়ি বি-বাড়িয়ার আশুগঞ্জে, তিনি জজ মিয়ার চতুর্থতম সন্তান। শায়খ নেছার আহমাদ আন নাছিরীর এই অর্জনে নিজ এলাকাসহ বাংলাদেশের সবাই গর্বিত।