১০০ বছরে হজের খুতবা দিয়েছেন যারা

হজ, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-06-10 20:15:18

সৌদি আরবের স্থানীয় তারিখ ৮ জিলহজ মোতাবেক ১৪ জুন, শুক্রবার মিনা যাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা। হজের আনুষ্ঠানিকতার দ্বিতীয় দিন হাজিরা ৯ জিলহজ শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন।

উকূফে আরাফা তথা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের ফরজ আমল। অর্থাৎ ৯ জিলহজ সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী রাতের সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্বে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয় হাজিদের।

এদিন আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। উপস্থিত হাজিরা ছাড়া বিশ্বের মুসলমানরা হজের খুতবা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।

এবারের হজের খুতবা দেবেন পবিত্র কাবার ইমাম ও খতিব শায়েখ ড. মাহের বিন হামাদ বিন মুয়াক্বাল আল মুয়াইকিলি। অসাধারণ কোরআন তেলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি।

১৪২৮ হিজরিতে মসজিদে হারামের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৫৪ বছর বয়সী এই আলেম পবিত্র কাবার ইমাম হিসেবে ১৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

দশম হিজরি সনে বিদায় হজ অনুষ্ঠিত হয়। দশম হিজরির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ আরাফাতের ময়দানে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার সাহাবির সামনে নবী কারিম (সা.) যে বক্তব্য পেশ করেন তা বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে পরিচিত।

ওই ভাষণের অনুকরণে হজের সময় আরাফাতের ময়দানসংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে এখনও হজের খুতবা দেওয়া হয়। খুতবায় সমসাময়িক বিষয়ে মুসলমানদের করণীয় বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা থাকে। সেই সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের টেলিভিশন হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করে। সৌদি আরব কর্র্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে হজের আরবি খুতবা বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। সৌদি আরবের স্থানীয় সময়ানুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর সোয়া ১২টার পর।

সম্প্রতি হারামাইন পরিষদ বিগত একশ বছর ধরে যারা হজের খুতবা দিয়েছেন, তাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা গেছে, ১৩ জন ইমাম গত একশ বছরে হজের খুতবা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৪০২ হিজরি (১৯৮১ সাল) থেকে টানা ১৪৩৬ হিজরি (২০১৫ সাল) পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় ৩৫ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আলে শায়খ। ২০১৬ সালে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেন। এরপর থেকে প্রতি বছর একজন করে নতুন খতিব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আলে শায়খের অবসরের পর প্রতিবছর একজন করে হজের খুতবা দিয়ে আসছেন, ছবি: সংগৃহীত


তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খ। তিনি ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি পর্যন্ত ৩৩ (এক বছর বাদে) বছর হজের খুতবা দিয়েছেন। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খ। তিনি ১৩৭৭ হিজরি থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত ২৩ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন।

হজের খতিবদের তালিকা হলো-
এক. ১৩৪৩ হিজরি, শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল লতিফ আলে শায়খ।
দুই. ১৩৪৪ হিজরি থেকে ১৩৭৬ হিজরি সাল পর্যন্ত শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খ।

তিন. ১৩৭০ হিজরিতে পিতা শায়খ আবদুল্লাহ্ বিন হাসানের অনুপস্থিতিতে হজের খুতবা দেন শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খ।

চার. ১৩৭৭ হিজরি থেকে ১৪০১ হিজরি পর্যন্ত খুতবা দেন শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে-শায়খ। তিনি শায়খ আবদুল্লাহ বিন হাসান আলে শায়খের সন্তান এবং শায়খ মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ্ বিন হাসান আলে শায়খের ভাই।

পাঁচ. ১৩৯৯ হিজরিতে খুতবা দেন শায়খ সালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লুহাইদান।
ছয়. ১৪০২ হিজরি থেকে ১৪৩৬ হিজরি পর্যন্ত হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আলে শায়খ।

সাত. ১৪৩৭ হিজরিতে (২০১৬ সালে) হজের খুতবা দেন মসজিদে হারামের প্রধান খতিব ও হারামাইন পরিচালনা কমিটির প্রেসিডেন্ট শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস।

আট. ১৪৩৮ হিজরিতে (২০১৭ সালে) শায়খ ড. সাআদ আশ শাসরি।
নয়. ১৪৩৯ হিজরিতে (২০১৮ সালে) হজের খুতবা দেন মসজিদে নববির বর্তমান ইমাম ও মদিনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শায়খ ডা. হুসাইন বিন আবদুল আজিজ আশ শায়েখ।

দশ. ১৪৪০ হিজরিতে (২০১৯ সালে) শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান আলে শায়খ।
এগারো. ১৪৪১ হিজরিতে (২০২০ সালে) শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া। শায়খ মানিয়া হলেন সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব।

বারো. ১৪৪২ হিজরিতে (২০২১ সালে) হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদে হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ বানদার বিন আবদুল আজিজ বালিলাহ।

তেরো. ১৪৪৩ হিজরিতে (২০২২ সালে) হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের রাজনীতিক এবং দেশটির সাবেক বিচারমন্ত্রী শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা। বিশ্ব মুসলিম লীগের মহাসচিব ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক হালাল অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট।

চৌদ্দ. ১৪৪৪ হিজরিতে (২০২৩ সালে) হজের খুতবা দেন সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর