সর্বভারতীয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার (নিট-ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট) ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবারের পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ৬৭ জন। এই ৬৭ জনের মধ্য ১৪ জন মেয়েশিক্ষার্থী। তন্মধ্যে র্যাংকিংয়ে প্রথম হয়েছেন মুম্বাইয়ের আমিনা আরিফ কাদিওয়ালা। আমিনা ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭২০ নম্বরই পেয়েছেন।
দেশটির গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুড ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, পরীক্ষায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৪ হাজার ৭৫০টি কেন্দ্রে ২৪ লাখ ৬ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৩ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।
ভারতজুড়ে প্রায় ২৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর মাঝে আমিনা আরিফের প্রথম স্থান অর্জন বিরাট কৃতিত্বের পরিচায়ক। আমিনা পড়াশোনা করেছেন মুম্বাইয়ের এক উর্দু মিডিয়াম স্কুল থেকে।
আমিনা আরিফ একজন হিজাবধারী তরুণী। হিজাব তার শিক্ষার অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধক হয়নি, তার এমন ফলাফল এটাই প্রমাণ করে।
কিছুদিন দেশটিতে হিজাব নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কর্নাটকের আগের বিজেপি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মামলাটি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু মুসলিম ছাত্রীরা তাদের হিজাব বা শালীন পোশাক পরার অধিকার পরিত্যাগ করেনি।
উর্দু মাধ্যমের ছাত্রী আমিনার এমন সাফল্য সহজে ধরা দেয়নি। এর পেছনে রয়েছে অনেক না বলা পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। উর্দু মিডিয়াম হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় তাকে, তবে দমে যাননি আমিনা। আমিনার বাবা একজন বেকারি শ্রমিক।
নিটে প্রথম হওয়ার পর আমিনা সংবাদমাধ্যমে জানান, মন দিয়ে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। প্রতিদিন রুটিনমাফিক পড়াশোনা করেছি। শিক্ষকেরা যেভাবে গাইড করেছেন, সেভাবেই পড়েছি। তবে বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির থেকে নিটের প্রস্তুতি ওপর আমার জোর বেশি ছিল। যদিও নিট পরীক্ষায় এত ভালো র্যাঙ্ক হবে, তা ভাবিনি।
ভারতের মুসলিম সমাজে মেয়েরা লেখাপড়া ও গবেষণায় পিছিয়ে, তারা মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেয় না- এমন উদ্ভট কথাবার্তাকে মিথ্যা প্রমাণ করছে আমিনা আরিফ। ধর্মপালন, হিজাব পরিধান, পড়াশোনা এবং দারিদ্রের সঙ্গে কঠিন লড়াই সবকিছু নিয়েই আমিনা আরিফরা সাফল্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠছেন।
নিট হলো- ব্যাচেলর অব মেডিসিন এবং ব্যাচেলর অব সার্জারি (এমবিবিএস), ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস), ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদ, মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএএমএস), ব্যাচেলর অব সিদ্ধ মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএসএমএস), ব্যাচেলর অব ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিএইচএমএস) এবং নার্সিং বিএসসি (এইচ) কোর্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষা।
ভারতে এমবিবিএস, বিডিএস কোর্সে পড়তে নিট পরীক্ষায় পাস করা বাধ্যতামূলক। নিট সর্বভারতীয় স্তরে আয়োজন করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কলেজে ভর্তির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হয়।
নিটে পরীক্ষা দিতে হলে প্রার্থীকে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়গুলো থাকা বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে ওই বিষয়গুলোয় ন্যূনতম ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ নম্বর না থাকলে নিট পরীক্ষা দেওয়ার আবেদনের সুযোগ থাকে না।
নিট পরীক্ষা দিতে প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ১৭ বছর হতে হবে। এ পরীক্ষা দিতে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নেই।
নিট পরীক্ষা দিতে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। তবে ইংরেজি ছাড়াও হিন্দিসহ আরও ১১টি ভাষায় দেওয়া যায় নিট পরীক্ষা। বাংলা, অসমিয়া, গুজরাটি, মালয়ালম, কন্নড়, মারাঠি, ওডিশি, তামিল, তেলেগু, উর্দু ও পাঞ্জাবি ভাষাতেও নিটে অংশগ্রহণ করা যায়।