বর্তমানে দেখা যায়, আমাদের দেশের প্রায় মসজিদই নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় তালা মেরে রাখা হয়। এ ব্যাপারে মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদ ময়লা হয়ে যায় এবং মসজিদের আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
যদিও অনেক সময় মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস টাইমের ফাঁকে ফাঁকে অবসর সময় পেয়ে নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত কিংবা অন্যান্য দ্বীনী বইপত্র পড়তে মসজিদের যেতে চায়। কিন্তু মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় উপযুক্ত স্থান না পেয়ে এসব আমল করা হয়ে উঠে না। উল্টো মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় অনেককে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
বর্ণিত অবস্থায় করণীয় প্রসঙ্গে ইসলামের বিধান হলো- মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান ও দ্বীন শিক্ষার অন্যতম জায়গা। মসজিদ শুধু নামাজের জন্য নয়; বরং জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনী তালিমের জন্যও বটে।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদ হলো- নামাজ, জিকির ও কোরআন পড়ার জন্য। -সহিহ মুসলিম: ২৮৫
তাই নিয়ম হরো- ফরজ নামাজের সময় ছাড়াও মসজিদকে প্রয়োজন মোতাবেক ইবাদত, তালিম ও জিকিরের জন্য উন্মুক্ত রাখা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ বন্ধ রাখা ঠিক নয়।
ইবনুল হুমাম (রহ.) বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে, মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদানের অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রমাণ হিসেবে বলেন, ‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়।’ -সূরা বাকারা: ১১৪
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদের মালামাল হেফাজতের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো কোনো ইসলামি স্কলার প্রয়োজনের কারণে নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখাকে জায়েজ বলেছেন। তাই এ ধরনের প্রয়োজনে অন্যান্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখার অবকাশ আছে।
কিন্তু সেক্ষেত্রেও নামাজের পরপরই বন্ধ করবে না; বরং জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় খোলা রাখবে। যেন পরে আসা মানুষ ফরজ আদায় করতে পারে এবং জামাতের পরে যারা একটু সময় নিয়ে নফল ইবাদত করতে চায় তাদের জন্যও যেন সুযোগ থাকে।
উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, জামাত শেষ করার সামান্য পরেই মসজিদের মোয়াজ্জিন-খাদেমরা মসজিদে অবস্থানরত মুসল্লিদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকেন- যা কিছুতেই সমীচীন নয়।
আর যেখানে নামাজের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়েও ইবাদত ও দ্বীনী তালিমের উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের মসজিদে ব্যাপক আসা-যাওয়া থাকে ওই সব মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এ জন্য প্রয়োজনে মালামাল হেফাজত করা ও মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদেম নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
আর কোনো ক্ষেত্রে পুরো মসজিদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে অন্তত মসজিদের কোনো অংশ অথবা বারান্দা (বাতি ও পাখাসহ) খোলা রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
প্রাসঙ্গিকভাবে এ কথাও জেনে রাখা দরকার, মসজিদে যে দ্বীনী কাজ করা হবে তা ইসলামি শরিয়তের আহকাম মোতাবেক হওয়া জরুরি এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে যেমন শরিয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন করা জায়েজ নয় তেমনি মসজিদের বৈধ ও স্বীকৃত কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করাও ঠিক নয়।