আদর্শ পরিবার আল্লাহতায়ালার বড় অনুগ্রহ। আদর্শবর্জিত পরিবারে টাকা-পয়সা, ধনস্পদের প্রাচুর্য থাকলেও সেখানে শান্তির নেই। পশ্চিমা সমাজে অহরহ পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে অথচ তাদের নিকট জাগতিক প্রাচুর্যের কোনো অভাব নেই। এখান থেকে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে।
পরিবার থেকে শান্তি উধাওয়ের পেছনে অশ্লীলতার প্রসারকে অনেকে দায়ী করেন। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য যে, তারপরও মুসলমানদের অনেকেই এটা বুঝে বা না বুঝে অপসংস্কৃতির অবগাহে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। মুসলমানরা তাদের সম্মানের বস্তু কোরআনে কারিম এবং সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এর অনুসরণ ও অনুকরণকে বাদ দিয়ে ভিত্তিহীন মানবরচিত চিন্তাধারার অনুসরণ করছে। এ কারণে পারিবারিক অশান্তি আরও বাড়ছে।
ইসলাম মনে করে, আদর্শ পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, মাতাপিতা, ভাইবোন সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ সবাই পরিবারের সদস্য। আর পরিবারের সদস্য হিসেবে সবাইকে সদা সতর্ক থাকতে হবে, যাতে একজনের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়ের কারণে অন্যজন ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পারিবারিক জীবন প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর জন্যে অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো আদর্শ নেই যার জীবনের সর্ববিষয় অনুসরণ করা যায়।
ইসলাম আরও মনে করে, আদর্শ পরিবার গঠনে আদর্শ শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আদর্শ তথা ইসলামি নয় বিধায় ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র মাদরাসা, স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করাতে সচেষ্ট থাকলে হবে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে অভিভাবকদের সর্বদা সচেতন থাকতে হবে যাতে ছেলেমেয়েরা বিপথে পা না বাড়ায়। অভিভাবকদের সুশিক্ষার ঘাটতির কারণে ছেলেমেয়ে কোনো পাপ কাজ করলে সেই পাপের কর্মফল অভিভাবককেও ভোগ করতে হয়।
ইসলামি স্কলাররা আদর্শ পরিবার গঠনে বেশকিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেসব অনুসরণ করলে পরিবারে শান্তি আসবে। বিষয়গুলো বিস্তারিত না বলে শুধু পয়েন্ট আকারে আলোচনা করা হলো। ওই সব বিষয় হলো- বিয়ের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখে নেওয়া, স্বামীর পক্ষ থেকে ওলিমার আয়োজন করা, সন্তানের আকিকা দেওয়া, ইসলামি নাম রাখা, সন্তানকে পূর্ণ দুই বৎসর দুধ পান করানো, সন্তানদের সুশিক্ষিতরূপে গড়ে তোলা, সন্তানদের সর্বদা শাসনের মধ্যে রাখা, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের যথাসময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা, সর্বদা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা, সার্বক্ষণিক আখেরাতের চিন্তা মনে লালন করা, নিজে দান-সদকা করা ও সন্তানদের দান-সদকা করার অভ্যাস বানানো, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা, স্বামীর সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা, অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা, পরিবারে দ্বীনী শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত রাখা, ভালো কাজে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা করা, উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বিয়ে না করা, বিয়ে করতে বা বিয়ে দিতে অযথা বিলম্ব না করা, বিয়েতে মোহরানা আদায়ে প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া, নারীদের আওয়াজ সংযত রাখা, ঘরে ইসলামি বই-পুস্তক রাখার ব্যবস্থা করা, শিশুদের সামনে পিতামাতার ঝগড়া-বিবাদ না করা, পারিবারিক গোপনীয়তা প্রকাশ না করা, হালাল উপার্জন করা, ভোরে না ঘুমানো এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া, পরপুরুষের সামনে নারীর সৌন্দর্য প্রকাশ না করা, পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলতে হলে (মোবাইলে বা সরাসরি) মোলায়েম সুরে না বলে স্বাভাবিক সুরে বলা, সন্তানের মাঝে ইনসাফ করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অবাধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, কন্যা সন্তান লালন-পালনে অনীহা প্রদর্শন না করা, পুরুষ শিক্ষক দ্বারা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে না পড়ানো, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে না পারার আশংকা থাকলে একাধিক বিয়ে না করা, স্বামীকে বৈধ কাজে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা, স্বামীর গোপনীয় বিষয় ও ধনসম্পদ রক্ষা করা, কথায় কথায় তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা, স্ত্রীকে সামর্থ্যানুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা, অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধনে ইসলামি পদ্ধতি অনুসরণ করা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সঙ্গদান ও যৌন তৃপ্তি দান করা, বালেগ হওয়া পর্যন্ত সন্তানের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা, অল্পে তুষ্টি, অতিরিক্ত বিলাসিতা ও অপচয় থেকে দূরে থাকা, পারিবারিক দৈনিক রুটিন অনুসরণ করে চলা, পারিবারিক যে কোনো বিষয়ে আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করা।
উল্লেখিত বিষয়গুলো অভিজ্ঞতার আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন। সুতরাং এগুলো মানার চেষ্টা করা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, আনুগত্য করো রাসূলের এবং সেসব লোকদের যারা তোমাদের মাঝে দায়িত্বপ্রাপ্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে, তাকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে সে অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে; এ হবে এক মহাসাফল্য।’
তাই মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো, আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা। রাসূলের অনুসরণ করা এবং আল্লাহ-রাসূলের নির্দেশনার আলোকে যারা নির্দেশনা দেবেন তাদের নির্দেশনামতে পারিবারিক জীবন পরিচালিত করা।