মুসলিম সমাজে একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি পরিহার করে চলার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালেমের হাতে সোপর্দ করবে না। সে তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে আল্লাহতায়ালা তার অভাব পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের কোনো বিপদ দূর করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের মধ্য থেকে কোনো বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন।’
এভাবে প্রতিটি মুসলমানকে অপর মুসলমানের সঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক স্থাপন করে ও বজায় রেখে সহাবস্থান করার নির্দেশ নবী করীম (সা.) দিয়েছেন।
সমাজে বসবাসকারী সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে পরস্পর সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সবার সঙ্গে সমঝোতার সুসম্পর্ক রাখার তাগিদ দিয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্খায় কেউ তা করলে তাকে অবশ্যই আমি মহাপুরস্কার দেব।’ -সুরা আন নিসা : ১১৪
বর্ণিত আয়াতে তিনটি কাজকে উত্তম বলে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত দান-খয়রাত, দ্বিতীয়ত সৎকাজ ও তৃতীয়ত পারস্পরিক অহিংসা। সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য এই তিনটিই অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুসলমানগণকে পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। দেহের কোনো অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তা হলে অপর অঙ্গগুলোও জ্বর ও নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে।’ –মিশকাত : ৪২২
সার কথা হলো, পারস্পরিক অহিংস-দৃঢ় সম্পর্ক, ঐক্য ও একাত্মবোধের মধ্যে মুসলমানদের শক্তি নিহিত। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইসলাম প্রতিবেশীর ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ দেয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তার শরিক করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গি-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে।’ -সুরা আনফাল : ৪৬
আল্লাহতায়ালা সকল প্রকারের ও সকল পর্যায়ের প্রতিবেশীর সঙ্গে অহিংস, সৌজন্যমূলক আচরণ ও সদাচারের নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ -মিশকাত
নবী করিম (সা.) হাদিসে আরও ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কসম, ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়, আল্লাহর কসম ওই ব্যক্তি ঈমানদার নয়। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? জবাবে তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না।’ -মিশকাত
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, ‘প্রতিবেশী যেকোনো ধর্মের, যেকোনো বর্ণের এবং যেকোনো আদর্শের অনুসারীই হোক না কেন, সর্বাবস্থায় প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারের প্রতি ইসলাম প্রত্যেক মুমিনকে উদ্বুদ্ধ করে। পৃথিবীর সকল মানুষের প্রতি উদার মনোভাব পোষণ ও মানবীয় আচরণ প্রদর্শন ইসলামেরই শিক্ষা। আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সকল প্রতিবেশীর সাথে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ ঈমানদারগণের ঈমানের দাবি।’
সুতরাং জাতি-ধর্ম-বর্ণ-মত, উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র ইত্যাদি নির্বিশেষে সকল প্রতিবেশী ইসলামের দৃষ্টিতে হিংসার ঊর্ধ্বে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহ পরিবারভুক্ত। আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হচ্ছে, ওই সৃষ্টি যে আল্লাহর অপরাপর সৃষ্টিকূলের প্রতি অনুগ্রহ করে।’ -বায়হাকি
অহিংসার আদর্শকে উজ্জীবিত রাখার লক্ষ্যে ইসলাম হিংসার বদলে মুত্তাকিসুলভ সংযমী হিংসার পথ অবলম্বনের বিধান দিয়েছে। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।