এই সময়ের বহুল আলোচিত বিষয় হলো- হতাশা। যাকে আমরা আপডেট ভার্সনে বলি ‘ডিপ্রেশন।’ বিশ্ব পরিস্থিতির নানা প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বয়সী মানুষ নানা ধরনের হতাশায়া ভুগছেন। হতাশার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্মঘাতীও হচ্ছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
আমরা জানি, জীবন প্রবহমান একটি যাত্রা। আল্লাহতায়ালা আমাদের দুনিয়াতে পাঠানোর পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সময়টুকু গতিশীল করে দিয়েছেন। শিশু থেকে আমরা বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হই এবং একটা সময় আমাদের গতিশীল এই জীবনের যবনিকা ঘটে।
ক্ষণস্থায়ী এই সময়টুকুতে আমাদের জীবনে যোগ হয় পাওয়া না পাওয়া, হারানো কিংবা হেরে যাওয়া। সর্বসাকূল্যে ব্যর্থতার বহিরূপ ‘হতাশা।’
অথচ একজন মুমিনের জীবনে ‘হতাশা’ নামক কোনো শব্দ নেই, থাকতে পারে না। এটি নিতান্ত ভীরু এবং দুর্বলচিত্তের মানুষের অনুভূতি। একজন সাহসী, ধৈর্যবান মুমিনকে হতাশা কখনও গ্রাস করতে পারে না। কারণ সফলতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধার নাম ‘হতাশা।’
হতাশাগ্রস্ত মানুষ আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়, হতাশ না হয়ে যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে; সে সর্বদা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা জুমার: ৫৩
আমরা অনেক সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে ভাবি, ‘আল্লাহ আমার ওপর এত বড় বিপদ কেন দিলো? আমি কী এমন পাপ করেছি? এত দুঃখ-কষ্ট কেন আমার?’
মূলত আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা নেন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন; নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাবো।’ -সূরা বাকারা: ১৫৫-১৫৬
কোরআনে কারিমের অন্যত্র মহান আল্লাহ এটাও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে।’ -সূরা আলামনাশরাহ: ৬
এরপরও আমরা যদি হতাশা নামক বোঝাকে স্বেচ্ছায় বহন করে বেড়াই, তবে দুর্দশা বৈ সফলতা আসবে না। আর তাই নির্র্দ্বিধায় বলা যায়, হতাশাগ্রস্তদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ ও কষ্ট।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের সাধ্যাতীত কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। যে যতটুকু বহন করার ক্ষমতা রাখে ঠিক ততটুকুই আল্লাহ তার ওপর তা অর্পণ করেন। সেটা সুখ-দুঃখ, সাফল্য, অর্থ-সম্পদ যেকোনো কিছুই হতে পারে। কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ -সূরা বাকারা: ২৮৬
ইসলাম মনে করে, ‘হতাশা’ একজন মুমিন বান্দাকে আল্লাহবিমুখ করে দেয়। আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ, ইবাদত এসব কিছুকে থমকে দেয় হতাশা নামক অর্থহীন অনুভূতি।
মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, ছোট্ট এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে বিপদ-আপদ, মুসিবত থাকবে- এটা চিরন্তন সত্য। একটা মানুষ কখনোই পরিপূর্ণ সুখ ও শান্তিতে জীবন কাটায় না। দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন, ব্যর্থতা এসব থাকবেই।
এরপরও একজন আল্লাহর প্রকৃত বান্দার উচিত সর্বদা ধৈর্য ধারণ করা, হতাশাকে প্রশ্রয় না দেওয়া। মহান আল্লাহর দরবারে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সাহায্য চাওয়া। আমরা মানুষ কোনো কিছুতে ব্যর্থ হয়ে হতাশাকে স্বাগত জানাই। তারপর সেই হতাশা কাটাতে জনে জনের দ্বারস্থ হই; সাহায্য বা মোটিভেট পাওয়ার জন্য।
অথচ দুনিয়ার বাদশা আল্লাহতায়ালার দরবারে সাহায্য চাইতে বেমালুম ভুলে যাই। ‘যে আল্লাহ আমার অন্তরে হতাশার জন্ম দিয়েছেন। সেই আল্লাহর কাছে দয়া এবং রহমত কামনা করে হতাশা দূরীভূত করি’ এটাই একজন আল্লাহর বান্দার বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। আল্লাহতায়ালা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সবাইকে হতাশামুক্ত জীবন দান করুন। আমিন।