একনিষ্ঠ ও বিশুদ্ধ ঈমানের অভাবে মুসলমানের মধ্যে অস্থিরতা, সামাজিক অনাচার ও চারিত্রিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশ মুসলানের ঈমান আছে, তবে তা একনিষ্ঠ নয়, বিশুদ্ধ নয়। আর পরিশুদ্ধ ঈমান না হওয়ার কারণে মানুষের চারিত্রিক অধঃপতন দিন দিন বাড়ছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষণ ও মিথ্যা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না।
এর ফলে মুসলমানরা সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো ও মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শক্তিও হারিয়ে ফেলছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিজয় অর্জন হয়েছিল ঈমানের বলে বলীয়ান হওয়ার কারণে। আর এখন সাময়িক সুবিধা, একটু নগদ লাভ কিংবা সুখের আশায় অধিকাংশ মুসলমান ঈমানের তাৎপর্যের কথা ভুলে গেছে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার প্রেক্ষিতে মানুষ ঈমান, নৈতিকতা, চরিত্র গঠন থেকে শুরু করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার কথা ভুলে গেছে। অথচ, আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। একমাত্র ঈমান চরিত্র গঠনের মাধ্যমে মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ঈমারেন বলে বলীয়ান এই মানুষগুলো হয় শান্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও কল্যাণকামী।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ -সূরা আর রাদ: ২৮
মানুষ হিসেবে আমরা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের অন্তরে শান্তি নেই, মনে সুখ নেই, মাথায় কোনো কল্যাণ চিন্তা নেই। অথচ এগুলো কীভাবে অর্জিত হবে তা আল্লাহতায়ালা নিজেই কোরআনে কারিমে বর্ণনা করেছেন।
ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশসমূহ পালন করে এবং আমার প্রতি দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়।’ –সূরা বাকারা: ১৮৬
এই আয়াতের শিক্ষা হলো, বান্দার যাবতীয় মসিবতে একমাত্র সাহায্যকারী আল্লাহ। তাই বান্দাকে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। তবেই বান্দা সব ধরনের বালা-মসিবত থেকে মুক্তি পাবে। বিপদে পড়ে বান্দা আল্লাহকে ডাকলে অবশ্যই আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সারা দেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালার ওয়াদা রয়েছে।
লেখার শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছিল, পরিশুদ্ধ ঈমানের অভাবে সমাজে অনাচার বাড়ছে- এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বর্তমানে সামাজিক যে অনাচার সবচে বড় আকারে দেখা দিয়েছে তা হলো- ধর্ষণ। মানুষ এর পরকালীন ক্ষতি জানে না পার্থিব ক্ষতিও জানে না। এটা নিকৃষ্ট কাজ ও পথ, যা কোরআনে বলা হয়েছে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।’ হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যভিচারকারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত থাকে তখন তার ঈমান থাকে না।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চারিত্রিক মহামারি ধর্ষণ ও নারীর সম্ভ্রমহানির খবরে সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষ বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কিত। প্রশ্ন হলো এহেন পরিস্থিতি কেন তৈরি হলো এবং পরিত্রাণের উপায়টা কী? উত্তরটা একেবারে স্পষ্ট। আমরা অনেকই ইসলামকে শুধু নামাজ-রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পরিপূর্ণরূপে নয় বরং আংশিকভাবে ইসলামি বিধিবিধান মান্য করতে ভালোবাসি। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ -সূরা বাকারা: ২০৮
বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোরআনের কিছু অংশে বিশ্বাস থাকবে আর কিছু অংশে অবিশ্বাস! এভাবে মুমিন হওয়া যাবে না। ইসলামি বিধিনিষেধ পূর্ণাঙ্গরূপে না মানাটাই হচ্ছে এই অবক্ষয়ের প্রধানতম কারণ এবং পূর্ণাঙ্গরূপে মানাটাই হচ্ছে এর প্রতিকার।
বর্তমান পৃথিবীতে অশান্তি, নিরাপত্তাহীনতা, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মতো মহামারিগুলো মূলত পর্দার বিধানকে উপেক্ষা করা এবং শরয়ি আইন কার্যকর না করার কুফল। এক হাদিসে এমনও বলা হয়েছে, লজ্জা ও ঈমান একটা অপরটার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এই দু’টোর কোনো একটি চলে গেলে অন্যটিও চলে যায়। সুতরাং পরিত্রাণ চাইলে নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা ও উলঙ্গপনার আমেজ তৈরি হয় এমন সব আয়োজনও বন্ধ করতে হবে।