অশ্লীলতা বিভিন্নরূপে, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রবেশ করেছে আমাদের সমাজে। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ভয়ঙ্করভাবে স্থান করে নিয়েছে পর্ণোগ্রাফি। এটা একটি গোপন পাপ। এর নেশা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবয়। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এর পেছনে যতটুকু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী এসব প্রতিরোধের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়া।
মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংসের ক্ষেত্রে পর্ণোগ্রাফির মতো বড় হাতিয়ার দ্বিতীয়টি আর নেই। এটা এমন একটি পাপ, যা নীরবে-নিভৃতে বেশ আয়োজন করে করতে হয়। এই গোপন পাপে আসক্ত লোকজন পাপকে সেভাবে পাপ মনে করে না। মনে রাখতে হবে, পাপ করা অপরাধ; কিন্তু পাপকে পাপ মনে না করা আরও কঠিনতম অপরাধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(আর তোমরা) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জানো।’
সামগ্রিকক্ষেত্রে এর ফলাফল মারাত্মক নেতিবাচক। বিশেষ করে যুব সমাজের জন্য। কারণে জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, চরিত্রে যুব সমাজ তারুণ্যদীপ্ত মানসিকতায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে ভবিষ্যতের জন্যে নিজেদের তৈরি করবে এটাই সমাজ, রাষ্ট্র ও অভিভাবকদের দাবি। এমতাবস্থায় তারা যদি মাদকাসক্তির ন্যায় পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে- তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন শুধু হুমকির সম্মুখীন হবে না বরং সম্ভাবনাময়ী চেতনার অপমৃত্যু ঘটবে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। প্রতিটিক্ষেত্রে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সুস্পষ্ট উপায়ে তার নীতিমালা পেশ করেছে। মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের সুষ্ঠু ব্যবহার বিধিও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটাই তাদের পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম। এবং তাদের মুমিন নারীদেরকেও বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে।’
হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোনো নারী অন্য নারীর গুপ্তস্থানের দিকে যেনো না তাকায়।’ -সহিহ মুসলিম: ৬৫৫
অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পরিহারের জন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বহু স্থানে বিভিন্নভাবে অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে গুরুত্বারোপ করেছেন। সূরা মুমিনুনের পাঁচ থেকে সাত নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘(অবশ্যই সফলকাম হয়েছেন মুমিনগণ) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। এবং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।’
এখানে বলা হয়েছে, যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তারা সফলকাম হয়েছে। আমরা বর্তমান সময়ে বাস করছি চূড়ান্ত নির্লজ্জ এক পৃথিবীতে। এমন এক পৃথিবী, যেখানে নিজের হাতের মুঠোফোন দিয়েই যে কোনো ওয়েবসাইট থেকে যেকোনো ভিডিও চালাতে পারি অনায়াসে।
পর্ণোগ্রাফী ইন্ডাষ্ট্রি বর্তমান একটি মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাষ্ট্রি। যার উদ্দেশ্য ও কাজই হলো কোনো না কোনোভাবে যেন প্রত্যেকেই এ নোংরামীর ভোক্তা হয় এবং প্রতিটি নারী-পুরুষ ও শিশুর সামনে এগুলো যেন উন্মোচিত হয় তারা তা আশা করে। আপনি দেখবেন, আসক্ত হবেন এবং পরিণত হবেন একজন ভোক্তায়।
এটা তৈরি করেছে কিছু অমানুষ, যারা মানুষকে পরিণত করছে পশুতে ও বিকারগ্রস্ত মানুষে। আর আমাদের তরুণ-যুবকদের মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে কারও কারও এ আসক্তি রয়েছে। কারণ অনেকেই অনলাইনে এসব দেখে। শুধু দেখেই শেষ নয়, বরং পরবর্তীতে আবার দেখার জন্য সংরক্ষণও করে রাখে।
এ সমস্যা শুধু পুরুষের নয় কিছু নারীরও, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা। এই কুঅভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। মনে করতে হবে, এটা একটা যুদ্ধ, এ যুদ্ধ যেকোনো সামরিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এটি সেই যুদ্ধ যা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের অন্তরকে, অনিশ্চিত পথে অগ্রসর হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ।
আমাদের সন্তানদের এ থেকে যতদূর সম্ভব বাঁচাতে হবে। এ জন্য নিজেদের সন্তানদের প্রস্তুত করতে হবে। অনেক ছেলে-মেয়ে ভেতরে ভেতরে পর্ণোগ্রাফীতে আসক্ত। বাবা-মা কিছুই জানে না। এ আসক্তির ফলে তাদের জীবনী শক্তি, আধ্যাত্মিক প্রাণশক্তি শূণ্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
অনেকেই পর্ণোগ্রাফীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। কেউ সফল, সফল না হলেও সমস্যা নেই, হাল ছেড়ে দেবেন না- চেষ্টা করুন; অব্যাহত রাখুন প্রচেষ্টা। নিজে কখনও একা থাকবেন না। ভালো বন্ধুর সঙ্গে থাকুন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করুন। এমন কোথাও চলে যান যেখানে আপনার আশেপাশে আরও লোক থাকবে। কারণ, আপনি যখন একা থাকবেন শয়তান আপনাকে একা পেয়ে বসে। আর আল্লাহতায়ালার ভয় আপনার মনে যদি যথেষ্ট না থাকে, অন্ততঃ মানুষের ভয় থাকে।