জাতিসংঘের রিপোর্টের প্রতিবাদ জানালো মিয়ানমার

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 01:18:09

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা ব্যবসার নামে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে টাকা নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন— জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের এমন রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমার।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন সোমবার (৫ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিয়ানমারের এ ধরনের ব্যবসায়ী সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৬ জুলাই) মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়—জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন অসত্য অভিযোগ করেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, এই রিপোর্টকে কোনো রকমেই আমরা স্বীকৃতি দেব না। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি সহযোগিতার মাধ্যমেই সবরকমের আন্তর্জাতিক ইস্যুর সমাধান সম্ভব। বিশেষ করে মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো।

মিয়ানমারের সামরিক ব্যবসায়ীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি না অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিলেই এ ধরনের সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে। এ জন্য সরকার রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীও তাদের নিজস্ব তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

জাতিসংঘের একটি অনুসন্ধানকারী মিশন সামরিক মালিকানাধীন ব্যবসায়ীদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অর্থ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাচিন, শান ও রাখাইন রাজ্যে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধবিমান, সাঁজোয়া যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধজাহাজ, ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার সরবরাহকারী চীন, রাশিয়া ও ইসরাইলসহ সাতটি দেশের অন্তত ১৪ বিদেশি সংস্থাকেও নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বানও জানিয়েছে।

জাতিসংঘের অনুসন্ধানকারী মিশন চেয়ারম্যান মারজুকি দারুসমান সোমবার ১১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমারের এ রাজ্যগুলোতে সামরিক ব্যবসা ও বিদেশি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে এ অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘন কমবে।

প্রতিবেদনে সামরিক নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেড (এমইএইচএল) এবং জেড ও রুবি খনির ক্ষেত্রে মিয়ানমার অর্থনৈতিক কর্পোরেশন (এমইসি) কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

জেড ও রুবির মতো মূল্যবান রত্নের অবৈধ বাণিজ্য রোধ করতে পারলেই এ অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

কারণ সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এমইএইচএল ও এমইসি-এর আওতায় বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক-বিমা ও পর্যটনসহ কমপক্ষে ১২০টি কোম্পানি সরাসরি যুক্ত রয়েছে। উভয় সংস্থারই কাচিন ও শান রাজ্যে জেড ও রুবি খনির লাইসেন্স রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সামরিক ব্যবসার সঙ্গে কমপক্ষে ১৫টি বিদেশি সংস্থার সরাসরি যৌথ উদ্যোগ রয়েছে। ৪৪টির সংস্থার সাথে নানান বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, যার সংখ্যাগরিষ্ঠই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং সিঙ্গাপুরের সংস্থা।

প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে যেন তারা অনুদান দিতে চিন্তা-ভাবনা করে। কারণ, ২০১৭ সালে কমপক্ষে ৪৫টি কোম্পানি এই সামরিক ব্যবসায়ীদের ১০.২ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর