বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব

, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-11-05 18:26:12

৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র ঘণ্টা বাকি। ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যেকেই পররাষ্ট্র নীতি ও অন্যান্য বিষয়ে স্বতন্ত্র পন্থা নিয়েছেন। মার্কিন স্বার্থের নিরিখে উভয় দলই উচ্চতর ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছেন, যার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল, যেমন ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাৎপর্যপূর্ণ হবেন। ফলে পুরো দুনিয়ার মতোই দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে।

এশিয়া

উভয় প্রার্থীর কাছেই এশিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন একটি বড় ফ্যাক্টর। উভয় নেতাই মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এবং কৌশলগত প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাবেন, এতে সন্দেহ নেই। হ্যারিস ক্ষমতায় এলে আরও লক্ষ্যযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করবেন, ভোঁতা নীতি বাতিল করবেন এবং মিত্রদের সমর্থন বেশি ব্যবহার করবেন। ট্রাম্প মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করে বিশ্বরাজনীতিতে যোগ দেবেন। তিনি চাইবেন চীনকে হটাতে সব দায় মার্কিনের উপর না দিয়ে তার সমর্থক দেশগুলোও দায়িত্ব গ্রহণ করুক। হ্যারিস বাইডেন প্রশাসনের অনুসৃত নিরাপত্তা নীতিগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। আর ট্রাম্প তাইওয়ান প্রণালী, কোরীয় উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মতো ইস্যুতে আরও অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবেন। তার নীতিতে প্রাধান্য পাবে ‘ডি-এস্কেলেশন‘।

নির্বাচনের পর এশিয়ার প্রতিটি দেশের সাথে মার্কিন সম্পৃক্ততার ভবিষ্যত গতিপথ পরিবর্তিত হবে নাকি একই থাকবে, সেটা এক বড় প্রশ্ন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘আসিয়ান‘ দেশগুলো জোরদার মার্কিন সম্পর্ক বলয়ে থাকবে, এটা নিশ্চিত। ‘আসিয়ান‘ দেশগুলো চাইবে  ওয়াশিংটনের সাথে চীনের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনাকে সীমাবদ্ধ করতে। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কেউই তা করতে চাচ্ছেন না। এতে মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বে চীন "উদীয়মান শক্তি" থেকে "পরাশক্তি রূপে উত্থিত" হওয়ার সুযোগ পাবে। ২০২৪ সালের শেষ পর্যায়ে  হোয়াইট হাউসে কে জিতবে তার উপর নির্ভর করবে এশিয়ার বাণিজ্য, ব্যবসা এবং নিরাপত্তার পরিবেশ। হ্যারিস এবং ট্রাম্প উভয়ই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াবেন এবং এই অঞ্চলের ব্যবসার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবেন।

দক্ষিণ এশিয়া

অনেক পর্যবেক্ষক যুক্তি দিয়েছেন যে, মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত সীমাবদ্ধ মনে হলেও তা বৃদ্ধি পেতে পারে চীন ও রাশিয়ার পদক্ষেপের কারণে। ফলে উভয় প্রার্থীই এ অঞ্চলকে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছেন। তবে, দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে দুই মার্কিন নেতার মধ্যে বাস্তব এবং সারগর্ভ পার্থক্য রয়েছে। মার্কিন নির্বাচন ও এতে বিজয়ীর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল তথা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে  সূদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখার বিষয়েও জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকগণ।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মার্কিন নির্বাচনে 'হট ইস্যু' হিসাবে আলোচিত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন প্রথম কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি বাংলাদেশের বিষয়কে তাঁর নির্বাচনী স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। অতীতে মধ্যপ্রাচ্য, ইসরায়েল, চীন, ইরান, লাতিন আমেরিকার কিউবা ও নিকারাগুয়া মার্কিন এজেন্ডায় স্থান পেলেও বাংলাদেশ সব সময়ই ছিল অনুপস্থিত। এবার বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বরোচিত সহিংসতার’ নিন্দা জানিয়ে এক্সে এক পোস্ট দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ অবশ্য মনে করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় এবং লবিস্টরা এই ইস্যুকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনেকেই মনে করছেন যে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ইউনূস সরকারের সাথে মার্কিন প্রশাসনের সুসম্পর্ক নাও থাকতে পারে। কারণ, ট্রাম্প যে সব উল্টে দেবেন তা না হলেও এটা ঠিক যে, বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মুখোমুখি হয়ে গেছে৷ ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার পরিবর্তন হবে৷ এতে মোদী ফ্যাক্টর কাজ করবে৷ কারণ ট্রাম্প আর মোদীর মধ্যে সম্পর্ক অনেক ভালো৷ তাই বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি ফ্যাক্টর হবেন৷ আর ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের জন্য তিনি চাইবেন বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প যেন তার চিন্তায় চিন্তা করেন৷ সেটা পুরেপুরি হবে না৷ তারপরও মোদী চেষ্টা করবেন, যার প্রভাব পড়তে পারে আঞ্চলিক পরিসরে। বিশ্লেষকদের মতে, এরই মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টরা সক্রিয় আছেন৷ নির্বাচনের পর তারা আরো সক্রিয় হবেন৷ লবিস্টরা নানা বিষয়ে মার্কিন নীতিকে প্রভাবিত করতে পারেন৷

অন্যদিকে, মনে করা হচ্ছে যে, ডেমোক্র্যাটরা/কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে বর্তমানে যে সরকার আছে তাদের জন্য সুবিধা হবে৷ তাদের সংস্কার কাজ, নির্বাচন এগুলো করা সহজ হবে৷ কারণ আগে থেকেই এসব বিষয়ে জো বাইডেন সমর্থন দিয়ে রেখেছেন৷ ট্রাম্প-কমলার সমর্থকদের মতো মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আছেন বিভক্তিতে। অভিবাসনের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে রিপাবলিকান। আর ডেমোক্রেটিকরা নাগরিক অধিকার, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উদারনৈতিক অবস্থানে রয়েছেন। তবে এই উদার ভূমিকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে অবাধে অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন আসার কারণে অভ্যন্তরীণ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক-সামাজিক এমনকি আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। এসব বিষয় ভোটারদের ভাবাচ্ছে।

বাংলাদেশি-আমেরিকানরা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেটদের ভোট দিয়ে আসলেও এবারের নির্বাচনে কমলা-ট্রাম্পে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বেশির ভাগ বাংলাদেশি ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। বাংলাদেশি মোট ভোটারের সংখ্যা হ্যামট্রামিক, ডেট্রয়েট, ওয়ারেন, স্টারলিংস হাইটস, ট্রয় সবমিলে মেট্রো ডেয়ট্রেটে প্রায় ১৫ হাজার হবে বলে অনেকেই মনে করেন। এরমধ্যে ১০ হাজার ভোট কাস্ট হলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাসের মধ্যে এই সংখ্যা বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে এবারের নির্বাচনে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে না বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, 'একজন বিশ্বনেতা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে উভয় দলের (যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি) জ্যেষ্ঠ নেতাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। দুই দলেই তাঁর (অধ্যাপক ইউনূস) বন্ধু আছে। সম্পর্ক অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিগত যোগাযোগের ওপর। অধ্যাপক ইউনূস একজন বিশ্বনেতা। সুতরাং কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোন না কেন, আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।’

ভারত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে শামিল কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ইন্ডিয়ান-আমেরিকানদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করার ব্যাপক চেষ্টা করে চলেছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়-আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তম এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় গোষ্ঠী হলো ভারতীয় আমেরিকানরা। এই জনসংখ্যাতাত্ত্বিক সুবিধা ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে যে কোনও এক পক্ষের দিকে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কমলা হ্যারিস প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব যিনি ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন।

২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আমেরিকার ইতিহাসে তর্কযোগ্যভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী। কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প, যথাক্রমে, দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা হোয়াইট হাউস দখল করবেন তা ভারতের জন্য প্রভাব সহ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিকে প্রভাবিত করবে।

চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় এবং একটি প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসাবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে ভারত ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনের দ্বারা স্বীকৃত। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান প্রযুক্তি খাত জুড়ে কৌশলগত সহযোগিতা গভীর করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মধ্যে একটি হল ২০২৩ সালে সমালোচনামূলক এবং উদীয়মান প্রযুক্তির (iCET) উদ্যোগের সূচনা৷ ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জৈবপ্রযুক্তি এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে নিয়মিত ব্যস্ততা বাড়িয়েছে৷

এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বীজ বপন করা হয়েছিল ক্লিনটন প্রশাসনের অধীনে একবিংশ শতাব্দীর জন্য একটি ভিশন হিসাবে। ক্লিনটনের পর থেকে প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত সফর করেছেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে নিয়মিত আলাপচারিতার মাধ্যমে এই সম্পর্কগুলো বজায় রেখেছেন। ফলে দল বা  নেতৃত্ব নির্বিশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের শাক্তিশালী সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। শক্তিশালী বন্ধু ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাও ক্রমবর্ধমান। ভারতীয় নেতৃত্ব আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হচ্ছে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ওয়াশিংটনের সাথে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, 'আমাদের বিশ্বাস আছে যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সাথে কাজ করতে সক্ষম হব, তিনি যেই হোন না কেন।'

তবুও ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন, রাষ্ট্রপতি এবং ভাইস-প্রেসিডেন্টের বিতর্ক এবং সংশ্লিষ্ট দলীয় প্ল্যাটফর্মের বক্তৃতা থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, হ্যারিস বা ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হলে চীন, রাশিয়া এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ভিন্ন ভিন্ন নীতি গ্রহণ করবেন, যেসব নীতি ভারতকেও প্রভাবিত করবে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমীকরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়াদিল্লিকে একটি মূল অংশীদার হিসাবে দেখে। সাম্প্রতিক অতীতে সবগুলো সরকার ভারতের সাথে একটি শক্তিশালী মার্কিন অংশীদারিত্বকে সমর্থন করেছে, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বেইজিংয়ের উপস্থিতি পিছনে ঠেলে দিতে আগ্রহী। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয়েই আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ার এবং মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সমর্থক। নতুন প্রেসিডেন্ট এসব নীতি থেকে সরবেন বলে মনে হয় না। 

পাকিস্তান

ট্রাম্প ও কমলা, উভয়েই পাকিস্তানের সাথে একটি কার্যকর সম্পর্ক চান, যা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইসলামাবাদের প্রচেষ্টা এবং আফগান শান্তি আলোচনায় সহায়ক হবে। পাকিস্তানও মার্কিন নির্বাচনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মোড়কের সন্ধান করছে। পাকিস্তানের জন্য মার্কিন অংশীদারিত্ব নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ।  নির্বাচনের ফলাফল মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্ককে, বিশেষ করে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং ভারত ও চীনকে নিয়ে আঞ্চলিক শক্তির গতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলবে, যা থেকে পাকিস্তানও মুক্ত থাকতে পারবে না।

তবে বিশ্লেষকগণ মনে করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানকে অবশ্যই সক্রিয় কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে, উন্মুক্ত সংলাপ এবং যৌথ স্বার্থ যেমন সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে মার্কিন সাহায্য ও সহযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। পাকিস্তান চাইবে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গভীর মার্কিন সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক এবং নতুন সুযোগ সৃষ্টি হোক। অন্যদিকে, নতুন মার্কিন নেতা প্রত্যাশা করবেন, পাকিস্তান যেন অবশ্যই মানবাধিকার ইস্যুতে গঠনমূলকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। তবে, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন মার্কিন নেতার সম্পর্ক বিনির্মাণে কিছু বিষয় ছায়া ফেলবে। যেমন, ট্রাম্প এবং ইমরান খানের ব্যক্তিগত রসায়ন বা ট্রাম্প-মোদির ‘ব্রোম্যান্স’সম্পর্ক। 

গণতন্ত্র দুর্বল হবে?

সবচেয়ে বেশি বিপদের বিষয় হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই জয়ী হোক, তাতে বিশ্বের চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথা বেশি হবে। কারণ, নির্বাচনে গণতন্ত্রই দুর্বল হবে বলে মনে করছেন আমেরিকার প্রায় অর্ধেক ভোটার। তারা দেশটির রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা এবং গণতন্ত্রের জন্য বৃহত্তর প্রভাব সম্পর্কে বেশ শঙ্কিত। এই শঙ্কার মধ্যে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন আমেরিকার প্রায় অর্ধেক ভোটার। ভোটের এক জরিপে উঠে এসেছে মার্কিন নির্বাচনে ভোটারদের এমন হতাশার চিত্র।

অনলাইন এনডিটিভি’র এক খবরে বলা হয়েছে, দ্য এসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪০ শতাংশ বলেছেন যে, তারা নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার সহিংস প্রচেষ্টার বিষয়ে ‘অত্যন্ত’বা ‘খুব’ উদ্বিগ্ন।

খোদ মার্কিন দেশেই যদি এমন বিরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে নতুন নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচারের পক্ষে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং আস্থার সাথে কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পারবে?

ড. মাহফুজ পারভেজ:  অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম; প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর