লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর দেরনার বাসিন্দা মাহমুদ আব্দুল করিম। ভয়াবহ বন্যায় মা ও ভাইকে হারিয়েছেন তিনি। আব্দুল করিমের মতো হাজার হাজার বাসিন্দা তাদের নিখোঁজ আত্মীয়দের উদ্ধারে মরিয়া হয়ে আছেন এ ধ্বংস নগরীতে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) আঘাত হানা প্রাণঘাতী ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন দেরনার মেয়র আবদুলমেনাম আল-গাইথি। সৌদি মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে তিনি বলেন, বন্যায় ধ্বংস হওয়া এ শহরটিতে মৃতের আনুমানিক সংখ্যা ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে পৌঁছাতে পারে।
আল-গাইথি আরও বলেন, মিশর, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক এবং কাতার থেকে উদ্ধারকারী দল পৌঁছেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং পানিতে বহু মৃতদেহ পড়ে থাকার কারণে শহরটি মহামারিতে আক্রান্ত হতে পাড়ে বলে আমি আশঙ্কা করছি।
ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল আঘাত হানার পর দেরনায় লিবিয়ার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তারেক আল-খারজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ভূমধ্যসাগরীয় শহরে এ পর্যন্ত ৩,৮৪০ জন মারা গেছে, যার মধ্যে ৩,১৯০ জনকে ইতিমধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন ছিলেন সুদান ও মিশরের নাগরিক।
এদিকে, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হিচেম আবু চকিউয়াত রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৩০০ জনেরও বেশি মৃতের সংখ্যা উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে এবং দ্বিগুণ হতে পারে বলে জানান তিনি।
দেরনা শহরে অবস্থানরত সাংবাদিক মাব্রুকা এলমসমারি মঙ্গলবার দেরনা ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, দেরনা শহরের বিপর্যয় ভয়াবহ। এখানে খাবার পানীয়, বিদ্যুৎ, পেট্রোল কিছুই নেই। শহরটি সমতল হয়ে গেছে এবং এখনকার বাসিন্দরা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার পানিতে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় অনেকেই আটকে গেছে। এ মুহূর্তে কিছু পরিবার স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয়ক দফতর ওসিএইচএ জানিয়েছে, দেরনায় বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫ হাজার। আবাসিক ভবনগুলো থেকে ভেসে আসা তাদের পোশাক, খেলনা, আসবাবপত্র, জুতা পরে আছে সাগরপাড়ে। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে দেরনা।