ইউরোপের অধিকাংশ দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এটিকে মহামারি করোনাভাইরাসের ‘চতুর্থ ঢেউ’ বলে উল্লেখ করছেন। ইউরোপে হঠাৎ ঊর্ধ্বমূখী করোনার এ সংক্রমণে ‘অতি উদ্বিগ্ন’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। খবর বিবিসির।
ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক পরিচালক ডা. হ্যান্স ক্লুজ বিবিসিকে বলেছেন, ‘ইউরোপে যেভাবে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, তাতে সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী মার্চ নাগাদ আরও অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো জারি করলে তাৎক্ষণিকভাবে ফল পাওয়া যাবে। শীত মৌসুম এবং পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও কারণ হতে পারে।’
হ্যান্স ক্লুজ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাস। তবে আশার কথা হলো- মরণঘাতি এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে কী করতে হবে, তা এখন আমরা জানি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ পরিচালক বলেন, ‘বাধ্যতামূলক টিকাদানকে শেষ অবলম্বন হিসেবে দেখা উচিত। তবে কারও ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করার বিতর্ক জড়ানো উচিত হবে না। আমাদেরকে সামাজিকভাবে সতর্ক হতে হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল এক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের বড় দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছেই। জার্মানিতে সংক্রমণ বাড়ার পর তা রুখতে করোনার টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। টিকাগ্রহণে নাগরিকদের বাধ্য করার মতো কড়াকাড়িও আরোপ করেছে দেশটি।
অস্ট্রিয়ায় টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইন করার চিন্তা করছেন দেশটির চ্যান্সেলর। সেখানে ২০ দিনের লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া টিকাগ্রহণের আইডি ছাড়া বাইরে চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে সব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে অস্ট্রিয়া সরকার।
নেদারল্যান্ডডেস করোনার সংক্রমণ রুখতে লকডাউন ঘোষণা করেছে ডাচ সরকার। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করার পথে হাঁটছে দেশগুলোর সরকার।
তবে ইউরোপের এসব দেশে টিকা বাধ্যতামূলক করাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা পরিপন্থী বলে ক্ষোভ জানাচ্ছেন দেশগুলোর নাগরিকরা। তারা লকডাউন ও সংক্রমণ রুখতে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ প্রতিবাদে রাস্তায়ও নেমেছেন। শনিবার নেদারল্যান্ডসের রোটারডমে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
অন্যদিকে, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি রাজ্যে টিকা বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। ফলে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে পিছু হটতে হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের।