দারুণ স্থাপত্যের সব অট্টালিকা নিয়েই পুরোটা শহর। এটা মূলত কোন দেশ নয়। অনেকেই এই শহরটাকে কোন একটা দেশ মনে করে থাকেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি রাজ্য অর্থাৎ একটি সিটির নাম দুবাই। পুরো শহরজুড়ে উঁচু উঁচু দালান। একেকটা যেন আকাশ ছুঁতে চায়, ডিজাইনে-নান্দনিকতায় ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইটাও স্পষ্ট। শহর থেকে একটু বাহিরে গেলেই দেখা মিলে ভিন্ন দৃশ্য। রাস্তার দু'পাশে দিগন্ত জোড়া বালুকাবেলা। অনেকটা আঁকা-বাকা রাস্তা। যেমনটা এখানকার রাজপথে তেমন একটা দেখা যায় না।
একদিকে যেমন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দালান দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এখানে, অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান দেখতেও দর্শনার্থীদের কমতি নেই। তেমনি দুবাইয়ের মরুভূমি না দেখলে যেন মনে হবে দুবাই ভ্রমণ করা হয়নি। একটা আফসোস থেকে যাবে। বিশেষ করে আরবের দেশগুলোকে মরুভূমির দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাই দুবাই বা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে মরুভূমি না দেখলে আফসোস থেকেই যাবে। মরুভূমি দেখতে হলে যেতে হবে দুবাই শহরের বাহিরে।
দুবাই মরুভূমি সাফারি একটি অভিনব অভিজ্ঞতা যা আপনাকে স্থানীয় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত করে দেবে। দুবাই মরুভূমি সাফারি দেশের উত্তরপশ্চিম এলাকা থেকে শুরু হয় এবং অনেক কম বর্ষার একটি সমতল এলাকায় পরিচর্যা করা হয়।
দুবাই সাফারি মরুভূমি দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। এটি একটি মরুভূমি সাফারি অভিজ্ঞতা যা দর্শকদের দুবাইয়ের বিশাল এবং সুন্দর মরুভূমির ল্যান্ডস্কেপ অন্বেষণ করার সুযোগ দেয়।
এমনিতে মরুভূমির কথা মনে হলে ছোটবেলা থেকে একটা ছবিই স্মরণ হতে পারে, অ্যরাবিয়াননাইটসের সেই আলিফ লায়লার কথা। ভোগ-বিলাসের সেই জীবনের কথা। ওমান সীমান্তের কাছে বা এর আশে পাশে রয়েছে মরু এলাকা। দুবাই শহর থেকে প্রায় ৮০-১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত ডেজার্ট সাফারি এলাকা।
প্রাইভেট গাড়ি, বাস অথবা ট্যাক্সি করে যেতে হবে ওখানে। সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হবে মরুভূমির ভিতরে ক্যাম্পের পাশে। সাফারিটি সাধারণত একটি ৪ঢ৪ গাড়িতে একটি রোমাঞ্চকর ডুন ব্যাশিং রাইড দিয়ে শুরু হয়, যেখানে দর্শকরা বালির টিলায় উপরে এবং নীচে গাড়ি চালানোর অ্যাড্রেনালিন রাশ অনুভব করতে পারে। গাড়ি চালানো শুরু থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ মিনিট চড়ার মধ্যেই অনুভূত হবে এক অসাধারণ রোমাঞ্চ। মরুভূমির উপর দিয়ে উঁচু উঁচু বালুর টিলা বেয়ে গাড়ি চড়াটা যে কত আনন্দের তা সরেজমিন না গেলে বুঝার উপায় নেই। গাড়ি একবার বালির পাহাড়ে উঠে তো আবার নিচে। মনে হবে এই বুঝি উল্টে যাবে গাড়ি।এতোদিন যা হলিউডের সিনেমায় দেখেছেন তার অভিজ্ঞতাটা এখানে আসলে বুঝা যাবে। মরুভূমি পেরিয়ে উঁচু থেকে নিচুতে ছুটতে থাকা গাড়িগুলো যেন বালির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই যে গাড়ি কাত হয়ে যাওয়া কিংবা প্রায় উল্টে যাওয়া এটিই এই ডেসার্ট সাফারির সেরা বিনোদন। এখানে যারা গাড়ি চালান তাদের প্রত্যেকের রয়েছে ডেজার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। মনে মনে ভয় ঢুকে যাবে তাদের ড্রাইভিংয়ে। কিন্তু নিরাপদ থাকবেন আপনি। তবে হ্যা, হার্টে সমস্যা থাকলে এই রাইডে যাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা বিধি-নিষেধও আছে!
টিলা বাশিং রাইডের পরে, দর্শকরা একটি ঐতিহ্যবাহী বেদুঈন-স্টাইল ক্যাম্পসাইট উপভোগ করতে পারে যেখানে তারা ঐতিহ্যবাহী আরব আতিথেয়তা অনুভব করতে পারে এবং উটের চড়া, মেহেদি পেইন্টিং এবং শিশা ধূমপানের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উপভোগ করতে পারেন।
মরুভূমি সাফারি একটি ভারী জিনিস, এবং এটি সুরক্ষিত ও কর্তব্যশীল হতে হবে। এখানে যাওয়ার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে স্থানীয় গাইডসহ সাফারি করছেন যা আপনাকে সুরক্ষা এবং জিজ্ঞাসা করতে সাহায্য করবে। মরুভূমি সাফারি আপনাকে অনেক অভিজ্ঞতা দেবে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অর্থহীন স্থানগুলো রয়েছে যেমন মরু ডেজার্ট এবং স্থানীয় বস্তুতেও অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। এই সাফারি পর্যটকদের সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাত বেলা পর্যন্ত চলে। সাফারি শুরু হয় আরব আদমির সাথে একটি জীবনযাপনে যেখানে আপনি উফানপূর্ণ আবহাওয়া এলাকার অসাধারণ দৃশ্য, শুকনো রেগিস্তান, সুন্দর সূর্যাস্ত এবং দুনিয়ার সবচেয়ে বড় স্থানীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা দেখতে পারবেন।
সাফারির অংশ হিসেবে দুবাই রেগিস্তান সফারি, স্কি বোর্ড সাফারি, বাগি সাফারি এবং ফালকন সাফারি, হাম্বার রাইডিং, ক্যামেল সাফারি, বিভিন্ন আকর্ষণ যেমন হাই ডিজার্ট ক্যাম্প, বেলনা চালানো, ক্যামেল রাইড, বেল্ট বাজি শো এবং ট্রাডিশনাল আরবি ডিনার জমিয়ে থাকে। আপনি যদি চান তবে আপনি একটি টেন্টে থাকতে পারেন এবং শান্তি এবং সুবিধা একটি স্বপ্নসুঞ্চনীয় অভিজ্ঞতা।
দুবাইয়ের এমন রোমাঞ্চের জীবন খুঁজতে চাইলে মরুভূমিতে যেন আসতেই হবে! সামগ্রিকভাবে, দুবাই সাফারি মরুভূমি একটি অনন্য এবং অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা যা দর্শকদের ঐতিহ্যবাহী বেদুঈদ জীবনধারা এবং আরবীয় মরুভূমির সৌন্দর্যের একটি আভাস দেয়।