ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সহযোগিতায় এখন থেকে ম্যানচেস্টার মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বৈচিত্রময় ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউজিয়ামটি আবারও চালু হয়েছে। যা দ্য ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের অংশ এবং যুক্তরাজ্যের সর্বপ্রথম মিউজিয়াম যেখানে স্থায়ীভাবে সাউথ এশিয়া গ্যালারি সংযোজন করা হয়েছে।
ম্যানচেস্টার মিউজিয়াম চিন্তার উন্মেষ ঘটানোর পাশাপাশি নানারকম অনুষ্ঠান ও পাবলিক প্রোগ্রামের আয়োজন করবে। দ্য সাউথ এশিয়া গ্যালারি কালেক্টিভের সহযোগিতায় (কো-কিউরেট) যুক্তরাজ্যে বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির অবদান স্মরণ করবে মিউজিয়ামটি। এতে করে তরুণ প্রজন্ম দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারবে। মিউজিয়ামটির মূল আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে - বাংলাদেশের রিকশা, ’৪৭-এর দেশভাগের সময় পরিধান করা হয়েছে এমন শাড়ি এবং দ্য সিং টুইনস’র মতো ব্রিটিশ শিল্পীদের তৈরি করা মুর্যাল, যেখানে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মিউজিয়ামের দক্ষিণ এশীয় গ্যালারি স্বতন্ত্রভাবে কো-কিউরেট করছে দ্য সাউথ এশিয়া গ্যালারি কালেক্টিভ। কমিউনিটি লিডার, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক ও সঙ্গীতশিল্পী সহ ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই কালেক্টিভের সাথে সম্পৃক্ত। এই গ্যালারিতে গল্প-নির্ভর ডিজাইনের মাধ্যমে ৬টি মূল থিমে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্রপূর্ণ প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। থিমগুলো হলো - পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট; লিভড এনভায়রনমেন্টস; সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন; সাউন্ড, মিউজিক অ্যান্ড ড্যান্স; ব্রিটিশ এশিয়ান ও মুভমেন্ট অ্যান্ড এম্পায়ার।
‘পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট’ থিমে ওই সময়কার প্রত্নতত্ত্ববিদদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতাকে দেখার সুযোগ পাবে মানুষ। পাশাপাশি, ‘লিভড এনভায়রনমেন্ট’ থিমে দক্ষিণ এশীয়দের জীবনে একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়ার গুরুত্ব এবং এখানকার পরিবেশের ওপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। থিমের এই অংশে একটি চলচ্চিত্র দেখানো হবে, যেখানে ভাসমান বাগানের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আধুনিক কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্ভাবক সত্যেন্দ্রনাথ বসু সহ তিনজন উপেক্ষিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবদান তুলে ধরার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার উদ্ভাবনের চিত্র তুলে ধরবে ‘সায়েন্স অ্যান্ড ইনোভেশন’ থিম। এছাড়া, ‘সাউন্ড, মিউজিক অ্যান্ড ড্যান্স’ থিমের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সঙ্গীতের বিভিন্নরকম ধারা ফুটিয়ে তোলা হবে। থিমের এই অংশে রয়েছে শ্রীলংকার প্রাচীন শঙ্খ-বাদ্য ‘হাকগেডিয়া’ থেকে শুরু করে ৮০ ও ৯০ দশকের সময় জনপ্রিয় উদযাপনের বিভিন্ন রীতি (সাউথ এশিয়ান ডেটাইমার্স রেভস)।
‘ব্রিটিশ এশিয়ান’ থিমে তুলে ধরা হবে মূলধারার ব্রিটিশ এশিয়ান সংস্কৃতিতে জায়গা পায় না এমন নারী ও এলজিবিটি (কিউয়ার) কমিউনিটির সদস্যদের গল্প এবং পপ থেকে শুরু করে শিল্পকর্মের বিভিন্ন অভিব্যক্তির মাধ্যমে নিজের পরিচয় অন্বেষণ করা হবে। সবশেষে ‘মুভমেন্ট অ্যান্ড এম্পায়ার’ থিমে দেখানো হবে দক্ষিণ এশিয়ার স্বেচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত দেশান্তর, যেখানে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় দেশান্তর ’৪৭-এর দেশভাগের দুঃসহ স্মৃতি ও যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে ম্যানচেস্টার মিউজিয়ামের সাউথ এশিয়া গ্যালারির কিউরেটর নুসরাত আহমেদ বলেন, ‘ব্রিটেনে জন্ম নেয়া প্রথম প্রজন্মের দক্ষিণ এশীয় হিসেবে এরকম একটি যুগান্তকারী প্রকল্পের অংশ হওয়া অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সাউথ এশিয়া গ্যালারি এমন একটি স্থান তৈরি করতে চায়, যা এই প্রজন্মের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করবে। আমরা অন্যান্য অভিবাসী কমিউনিটির সাথেও সংযুক্ত হতে চেষ্টা করবো এবং এর সমৃদ্ধির জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবো। গ্যালারিটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন মনে হবে কোনো মানুষ আসলে তার নিজের গল্পই বলছে।’
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পরিচালক হার্টউইগ ফিশার বলেন, ‘এই নতুন সাউথ এশিয়া গ্যালারি স্থাপনে ম্যানচেস্টার মিউজিয়ামকে সহযোগিতা করতে পেরে ব্রিটিশ মিউজিয়াম অত্যন্ত আনন্দিত। উদ্ভাবনী এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আমরা ম্যানচেস্টারে আমাদের সহকর্মী ও কমিউনিটিগুলো থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবো। যুক্তরাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দর্শকদের জন্য অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্যালারি তৈরি করা আমাদের জাতীয় প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’