সাধারণভাবে ‘পাখি’ শব্দটা শুনলেই মনে আসে – যারা আকাশে-গাছে উড়ে বেড়ায়। তারা পাখি। কিন্তু পাখিরাজ্যে কিছু পাখি রয়েছে যারা তৃণভূমি, পথপ্রান্তর কিংবা জলাশয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়ায়।
ওখানেই ওরা একটু খাবারের সন্ধানে ব্যয় করে প্রচুর সময়। তারপর পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন শেষ হলে নিজস্ব ডানার সাহায্যে দ্রুত সেই স্থানটি ত্যাগ করে। পাখা এবং পা দুটোই সমানভাবে টিকে থাকতে সাহায্য করে তাদের।
এমন পাখিরা সংখ্যায় কম হলেও পাখিরাজ্যকে হেঁটে হেঁটে টিকিয়ে রেখেছ। নিজস্ব খাদ্য সংগ্রহ করে প্রজনন রক্ষাসহ নানা প্রযোজনীয় কাজগুলো প্রজন্মের পরে প্রজন্ম ধরে নীরবে করে চলেছে।
আমাদের আজকের এমনই একটি বিশেষ পাখি ‘বাংলা কুবো’। বাঁশঝাড়ে বসে থাকে চুপ করে। নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করে। কিছুক্ষণ পর খাবারের সন্ধানে যখন এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছুটে যায় তখনই দেখা পাওয়া যায় তাকে।
এই পাখিটি আকারে পাতিকাকের মতো। প্রায় ৩৩ সেন্টিমিটার। এর পাখিটির অন্যান্য বাংলা নামগুলো হলো: কানাকুয়া, কুক্কা, ছোট কোকা, কুক্কাল বা কানাকুক্কা। ইংরেজিতে একে Lesser Coucal বলে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Centropus bengalensis।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণ গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, এই পাখি দুটো প্রজাতি আমাদের দেশে পাওয়া যায়। একটি হলো Grater Coucal (বড় কুবো) এবং অপরটি Lesser Coucal (বাংলা কুবো)। Grater Coucal পাখিটির চেয়ে Lesser Coucal বিরল। সহজে দেখা পাওয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, Lesser Coucal পাখিটিকে শুধুমাত্র সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং মধুপুরে পাওয়া যায়। তবে তেতুলিয়াতে পাখিটিকে পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। আমাদের মিশ্র চিরহরিৎ বন এবং পত্রঝরা বন বা ঘাস বন রয়েছে সেখানে এদের পাওয়া যায়। এরা আমাদের দেশের আবাসিক পাখি।
খাদ্য তালিকা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বড় আকারের পোকা। ঘাসফড়িং, মাড়কশা, ছোট ছোট সরীসৃপ প্রাণীও খায়। এরা একটু লুকিয়ে থাকে পছন্দ করে। প্রয়োজনে এরা মাটিতে নেমে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
প্রজনন ঋতুতে এদের ডানা লালচে ও কাঁধ-ঢাকনি ছাড়া পুরো দেহ চকচকে কালো হয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির লালচে শরীরে বাদামি ডোরা থাকে বলে জানান ড. কামরুল হাসান।