রাঙামাটি থেকে: জনবল সংকট, নোংরা পরিবেশ আর রোগীদের দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলছে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল। চিকিৎসকের ৩১টি পদের মধ্যে ১৪টিই খালি।
তবে নার্সের ৬৭টি পদ পূরণ হলেও অন্যান্য পদগুলোতে রয়েছে সংকট। ফলে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাঙামাটি সদর হাসপাতাল ঘুরে চোখে পড়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। এমনিতে শুক্রবার হাসপাতালের বহিঃবিভাগ বন্ধ থাকে। তবে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ হওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থায় এদিন খোলা রাখা হয়। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, চারপাশে ময়লা আবর্জনা পড়ে রয়েছে। বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, হাসপাতালের বহিঃবিভাগের পাশের বারান্দায় কুকুর ঘুমিয়ে রয়েছে। এভাবেই আরো বারান্দায় এবং আশপাশে দুপুরের রোদে ক্লান্ত হয়ে কয়েকটি কুকুরকে ঘুমাতে দেখা যায়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষটিতে রাখা হয়েছে পুরনো ফার্নিচার। হাসপাতালের মেঝে নোংরা হয়ে রয়েছে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ১০০। তবে এ সংখ্যা ২০০ তে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। এখানকার পুরুষ, নারী ও শিশু ওয়ার্ডের বেহাল দশা। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মেঝেতেও ফোমের বিছানা পেতে রোগী রাখা হয়েছে।
এখানে পুরুষ ওয়ার্ডের বাথরুমের দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে টেকা দায়! বাথরুমের ফ্লোরও নোংরা। ফলে অনেক পুরুষ রোগী এবং স্বজনরা নারী ও শিশুদের ওয়ার্ডের বাথরুম ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে অপরিচ্ছন্নতার জন্য লোকবল সংকটকেই দায়ী করছেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন ও গাইনি বিষয়ের জন্য চারটি সিনিয়র কনসালট্যান্ট পদের প্রতিটিই শূন্য। জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদের ছয়টির মধ্যে শুধুমাত্র নাক-কান-গলা এবং শিশু বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া আবাসিক চিকিৎসক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন একজন।
হাসপাতালের বিভিন্ন স্টাফ পদে লোকবলের সংকট রয়েছে। তবে বর্তমানে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ইন্টার্ন করায় চিকিৎসক সংকট কিছুটা পূরণ হচ্ছে।
হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বার্তা২৪.কমকে বলেন, লোকবল কম থাকলেও কোনো রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেরত পাঠানো হয় না। বরং ১০০ বেডের ব্যবস্থা এবং সমসংখ্যক খাবারের বরাদ্দ থাকলেও প্রতিদিনই আমাদের অতিরিক্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। যেমন শুক্রবারও রোগী ভর্তি রয়েছেন ১১৯ জন। যেভাবেই হোক অতিরিক্ত রোগীদের সেবা দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এই জেলার দুর্গম অঞ্চল থেকে রোগীদের আসতে কষ্ট হয়। আর হাসপাতালের নিজস্ব ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে হলেও রোগীদের হাসপাতালে আনা হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৪০০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।