রেকর্ড হারে বাংলাদেশে বেড়েছে এইডস রোগী। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম হলেও শনাক্তে বিগত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর প্রথমবারের মতো শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এই রোগের প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনার মাধ্যমেই সমাধান দেখছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২৭৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬৬ জনের। শুধু এ বছর ১৫ লাখ মানুষের এইচআইভি টেস্ট করানো হয়। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৯৮৪ জন এবং মারা গেছে ২ হাজার ৮৬ জন।
২০২৩ সালে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পুরুষ, ২৪ শতাংশ নারী ও ১ শতাংশ হিজড়া/ট্রান্সজেন্ডার। আক্রান্তদের ৬০.১৯ শতাংশ রোগী বিবাহিত। অবিবাহিত ৩১.৫০, ডিভোর্স ১.৩৩, বিপত্নিক ৪.৩১ শতাংশ। আক্রান্ত রোগীদের ৬৫ ভাগ রোগীর বয়স ২৫ থেকে ৪৯ এর মধ্যে।
২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এইডস নিয়ন্ত্রণে ইউএনএইডস (UNAIDS)-এর দেয়া তিনটি সূচক—নিজেদের এইচআইভি স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানা, শনাক্তের পর চিকিৎসা গ্রহণ, চিকিৎসার পর ভাইরালি সারপেসড; ৯৫-৯৫-৯৫ টার্গেটের ৭৩-৭৫-৯০ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
এইডস নিয়ন্ত্রণে নানামূখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের। বিশেষ করে দেশের সকল সরকারী হাসাপাতালে এইডস পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা, এইডস আক্রান্ত রোগীর জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল নেই। বাংলাদেশের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এইডস শনাক্তের জন্য সারাদেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় ১১টি কেন্দ্র থেকে। যা শুধু প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস এন্ড রেস্পন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর) উপদেষ্টা ডা. আবদুর নুন তুষার বলেন, আমাদের বিজ্ঞাপনে মাদক নেয়ার দৃশ্য দেখানো হয়। এসব না দেখানো উচিত। এসব দেখে অনেকে উৎসাহিত হয় এবং মাদক নেয়ার কৌশল রপ্ত করে। এইডস নিয়ন্ত্রণে এটিও একটি বড় বাধা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এইডস নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রথম টার্গেট এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা। এইডস শনাক্তের হার ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত নিশ্চিত করা গেলে আমাদের সফলতা আসবে। আমাদের শনাক্তের হার এখন ৭৫ শতাংশ। এটা গ্রহনযোগ্য নয়। বাকি ২৫ শতাংশ এই রোগ বহন করছে এবং তাদের থেকে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আহমেদুল কবির বলেন, একজন রোগিকে শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারাটাই হচ্ছে মূল বিষয়। রোগী এই রোগ থেকে মুক্ত হবে সেটা বিষয় না। রোগী শনাক্ত হলেই এইডস ছড়ানো বন্ধ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, এইডস আক্রান্তদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। সরকার বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। সরকার, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার, এনজিওগুলো এইডস নির্মুলে কাজ করে যাচ্ছে। তবুও এই রোগ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আমাদের দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সার্জারীর সময় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বারবার ব্যবহার করা হয়, যা থেকেও এই রোগ ছড়ায়।