দেশের প্রধান সংক্রমিত জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ ভাগ অকার্যকর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনার মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে। এ গবেষণার সার্বিক দিক তুলে ধরে তিনি এই তথ্য দেন।
বিএসএমএইউরতে সেবা নিতে আসা রোগীদের ওপর দেড় বছর ধরে গবেষণা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অন্তত ৭৫ ভাগ ইনফেকশন হয় টাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা, সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকসেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকেঁজো হয়ে গেছে প্রায় ৯০ ভাগ। এছাড়া আইসিইউর রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা চলতো তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া যেসব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলতো তা এখন কমিউনিটিতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার গবেষণা পত্র তুলে ধরেন। আর সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক এর ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জসমূহ বর্ণনা করেন অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কঠিন রোগে মানুষকে সেবা দিতে এবং মানুষকে বিদেশ না যেয়ে দেশেই চিকিৎসা নিতে। তাই ভবিষ্যতেও চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে।'
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা- নীরিক্ষা না করে রোগীদের অ্যাান্টিবায়োটিক দেয়া যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক দেশে মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে করোনা থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।
হাসপাতালে দর্শনার্থীরা রোগীদের দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, 'হাসপাতালে যাবেন রোগীকে দেখতে, একটু দূরে থেকে দেখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় রোগীকে দেখতে হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষও রোগী হয়ে যায়। এটাকে ক্রস ইনফেকশন বলে। এজন্য হাসপাতালে আসলেও দ্রুত চলে যেতে হবে দর্শনার্থীদের।'
অনুষ্ঠানে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত রোগীর নমুনায় সকল ধরনের জীবানুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশ করেন বেসিক সাইন্স ও প্যারা-ক্লিনিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় রোগীদের নমুনায় জীবাণু শনাক্তকরণ ও জীবাণু সমূহের এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা নির্ণয়ের বিএসএমএমইউতে থাকা প্রযুক্তিসমূহ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবিলায় এই বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিনগণ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকবৃন্দ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।