যার অভিনয় নিয়ে বিন্দু পরিমাণ প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই তিনি ফজলুর রহমান বাবু। সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমাতে। গেলো ঈদ নাটকেও সবচেয়ে আলোচিত অভিনেতা তিনি। তার অভিনয় দক্ষতায় সাড়া ফেলেছে ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’। সম্প্রতি নিজের অভিনয় জীবন নিয়ে ফজলুর রহমান বাবু মুখোমুখি হয়েছিলেন বার্তা২৪.কমের সঙ্গে। তাকে মোবাইল ফোনে ধরেছেন ইসমাইল উদ্দীন সাকিব।
বার্তা২৪.কম: গল্প নাকি আপনার অভিনয় দক্ষতায় জনপ্রিয়তা পেলো ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’?
ফজলুর রহমান বাবু: এটা দর্শকরা ভালো বলতে পারবে। তারপরও আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, এটি মানবিক গল্প। একটা বয়স্ক মানুষ তার জীবনে নানান বঞ্ছনার শিকার; সন্তানকে মানুষ করেছে, নিজে স্বপ্ন দেখেছে শিল্পী হবে। মনে করেছে শেষ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে পিতা যা আশা করে তা পাবে। কিন্তু সে পেল তার উল্টোটা। বলা যায় তার জীবন হতাশার মধ্যে ছিল। যখন সে আলোর মুখ দেখল এবং সন্তান তুল্য একটা ছেলে পেল যার সঙ্গে তার জীবনের গল্প শেয়ার করেছে তখনই তার জীবনের বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল। এ ধরণের জীবনের গল্প বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে।
বার্তা২৪.কম: এখন আবেগ নিয়ে বেশিরভাগ নাটক নির্মিত হয় কেন?
ফজলুর রহমান বাবু: শিল্পের অনেক রস আছে। বাঙালী একটু বেশি করুণ রসের প্রতি অনুরক্ত। সেকারণের দুঃখের ছবি বেশি নির্মিত হয়। তাছাড়া আমাদের মহিলা দর্শক করুণ রস অনেক বেশি পছন্দ করে। তাই নির্মাতারা ভাবে এধরণের কাজ বেশি মানুষ দেখবে। মূল বিষয় হলো, সে জিনিস মানুষ বেশি দেখে যেটা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে, যেটা তার জীবনের সাথে মিলে, তার জীবনের ছায়াটা যখন দেখতে পায় শিল্পের মধ্যে।
বার্তা২৪.কম: ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ নাটকে একটি সংলাপ ছিল ‘এখন থিয়েটারটা করতে পারি না’। বাস্তব জীবনেও এই আক্ষেপ...
ফজলুর রহমান বাবু: আমি থিয়েটারটাই করতে চেয়েছিলাম সারাজীবন। থিয়েটারটা শেষে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল। আমি ব্যাংকে চাকরি করতাম। জীবিকার জন্য অভিনয় করলে আমাকে টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে হবে। আমি থিয়েটার করে আমার জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো না। সেকারণে টেলিভিশনে আসতে হয়েছে এবং কাজ করা শুরু করেছি, এখন চলচ্চিত্রে কাজ করি। এটা পেশাগত ভাবে করতে গেলে দুই জায়গায় একইসাথে করা সম্ভব না। আমার অভিনয়ের জন্ম থিয়েটার থেকে। সে জায়গাটাকে অবশ্যই অনেক মিস করি, অনেক ভালোবাসি,আমার প্রাণের জায়গা।
বার্তা২৪.কম: থিয়েটার করার সময়কার গল্প...
ফজলুর রহমান বাবু: আমি যখন ‘বৈশাখী নাট্য গোষ্ঠী’ তে কাজ করেছি সেটা খুবই অল্প সময়, বছর দুই এক। আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি সময় কাজ করেছি ঢাকা ‘আরণ্যক নাট্য দল’ এর সঙ্গে। আমরা থিয়েটার করতাম ঐ জায়গা থেকে না; যে আমাকে কত দ্রুত মানুষ চিনবে, বিভিন্ন জায়গায় যাবো, টেলিভিশন বা ফিল্মে কাজ করবো। আমরা একটা কমিটমেন্টের জায়গা থেকে কাজ করতাম, যেটা অনেকাংশে সামাজিক ও রাজনৈতিক। আমরা মনে করতাম থিয়েটার করে মানুষকে জাগাবো। আমরা শিল্প করেছি মানুষের জন্য। আমাদের স্লোগানই ছিল ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণি সংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার’। আমরা সমাজ পরিবর্তনের একটা সহায়ক শক্তি হিসেবে নাট্যকর্ম করি।
বার্তা২৪.কম: এত ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার চ্যালেঞ্জ থাকে না...
ফজলুর রহমান বাবু: আমি তো অভিনেতা, আমার কাজই হচ্ছে নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করা, সুযোগ পাওয়া, সেই চ্যালেঞ্জটাকে গ্রহণ করা এবং নিজেকে ভেঙ্গে অন্য জায়গায় নিতে পারা। কখনো হয়, কখনো হয় না; এটা দর্শক বিচার করবে।
বার্তা২৪.কম: কোনো সিনেমা বা নাটক দেখে কি মনে হয়েছে, ইশ এই চরিত্রটা যদি আমি করতে পারতাম?
ফজলুর রহমান বাবু: এরকম তো অসংখ্য। যেকোনো ভালো ছবি সেটা দেশে বা বিদেশে হোক কোনো অসাধারণ অভিনয় দেখলে মনে হয় এটা যদি আমি করতে পারতাম। যেমন ভারতের ‘পাড়’ ছবিতে নাসিরুদ্দিনের চরিত্র দেখে মনে হয়েছে এই চরিত্রটি যদি আমি করতাম। সাম্প্রতিক ‘মিরাকেল ইন সেল নাম্বার সেভেন’র এক চরিত্রে সহজ-সরল বাবা, দেখে মনে হয়েছে এই চরিত্রটি যদি আমি করতে পারতাম।