ছয় দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবার সম্মানসূচক পাম দ’র পেলেন আলেন দ্যুলো। রোববার (১৯ মে) তার হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন মেয়ে আনুশকা। এ সময় পালে দে ফেস্তিভাল ভবনের সাল দুবুসি থিয়েটারে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় তাকে।
মেয়ের হাত থেকে পুরস্কারটি নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আলা দ্যুলো। তখন তাকে জড়িয়ে ধরেন আনুশকা। ৮৩ বছর বয়সী এই গুণী মানুষের চোখে দেখা গেছে আনন্দ অশ্রু। মঞ্চে এ সময় ছিলেন কান উৎসবের সভাপতি পিয়ের লেসকিউর ও পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো।
যদিও আলা দ্যুলোকে সম্মানসূচক পাম দ’র দেওয়ার সিদ্ধান্তে সমালোচনা তৈরি হয়। নারীদের নিয়ে কটূক্তি ও সমলিঙ্গের বিয়েবিরোধী মনোভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় পিটিশন চালু হয়। এতে স্বাক্ষর করে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এ কারণে তাকে পাম দ’র না দেওয়ার দাবি ওঠে। কিন্তু সব সমালোচনাকে উড়িয়ে তাকেই সম্মানসূচক পাম দ’র দিলো আয়োজকরা।
ষাট ও সত্তর দশকে আলা দ্যুলো ছিলেন হার্টথ্রব। ওই সময়ে ধ্রুপদী কিছু ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ফ্রান্সের আইকনে পরিণত হন তিনি। পুরস্কার গ্রহণের পর অশ্রুসিক্ত চোখে তার মুখে শোনা যায়, ‘একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, সত্যিকার অর্থেই যদি কোনও কিছু নিয়ে গর্ব করি তাহলে তা আমার ক্যারিয়ার। এই সম্মান আমার ক্যারিয়ারের জন্য দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনোকিছুর জন্য না। এজন্য আমি খুশি, আনন্দিত ও সন্তুষ্ট।’
উৎসবের ষষ্ঠ দিনে (১৯ মে) সকাল ১১টায় সাল বুনুয়েলে ছিল আলা দ্যুলোর মাস্টারক্লাস। এই আয়োজনে নিজেকে নির্দোষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সমকামি বিয়েবিরোধী নই। এ নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। মানুষের যা ইচ্ছে করতে পারে। তবে সমলিঙ্গের দম্পতির দত্তক সন্তান নেওয়ার বিরোধী আমি। আর যদি কখনও বলে থাকি, কোনও নারীকে চড় দিয়েছি; তাহলে বেশি চড় খেতে হয়েছে আমাকে। জীবনে কখনও কোনও নারীকে হয়রানি করিনি। তারাই বরং আমাকে হেনস্তা করেছে।’
রূপালি পর্দায় অসাধারণ কাজগুলোর প্রতি সম্মান জানাতে পাম দ’র প্রদানের পর সাল দুবুসিতে দেখানো হয় তার অভিনীত জোসেফ লসির ‘মিস্টার ক্লেইন’ ছবির পুনরুদ্ধার করা প্রিন্ট। ১৯৭৬ সালে এটি জায়গা পায় প্রতিযোগিতা বিভাগে। এর আগে রবিবার লালগালিচায় অফিসিয়াল আয়োজনে পায়চারি করেছেন বাবা-মেয়ে।
১৯৬২ সালে আলা দ্যুলোর ‘দ্য এক্লিপস’ কানে বিশেষ জুরি প্রাইজ জেতে। এটি পরিচালনা করেন ইতালির মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি। ১৯৬৩ সালে কান উৎসবে স্বর্ণ পাম জেতে লুকিনো ভিসকন্তি পরিচালিত ‘দ্য লিওপার্ড’।
১৯৬০ সালে রেনে ক্লেমো পরিচালিত ‘পারপাল নুন’ ছবির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান আলা দ্যুলো। তখন তার বয়স মাত্র ২৫ বছর। এরপর ধ্রুপদী অনেক ছবিতে দেখা গেছে তাকে। ৮০টিরও বেশি ছবি আছে তার ঝুলিতে। এর মধ্যে মাস্টারপিস অসংখ্য। মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি, লুকিনো ভিসকন্তি, জ্যঁ-পিয়ের মেলভিল, জোসেফ লসি, জ্যঁ-লুক গদার, জ্যাক দ্যুরের মতো মাস্টার ফিল্মমেকারদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেছেন আলা দ্যুলো।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কান উৎসবের সঙ্গে আলা দ্যুলোর সম্পর্ক নিবিড়। ১৯৬১ সালের ১৩ মে প্রথমবার কানসৈকতে লালগালিচায় হেঁটেছিলেন তিনি। ওই বছর অফিসিয়াল সিলেকশনে নির্বাচিত হয় তার ‘দ্য জয় অব লিভিং’।
১৯৬৪ সালে আলা ক্যাভালিয়ের পরিচালিত ‘দ্য আনভ্যানকুইশড’ ছবির মাধ্যমে প্রযোজনায় নাম লেখান আলা দ্যুলো। এরপর ক্রাইম থ্রিলার ধাঁচের দুটি ছবি (দ্য ফাইটার, ফর অ্যা কপ’স হাইড) পরিচালনা করেন তিনি। জ্যঁ-প্যাট্রিক মোঁশেতের উপন্যাস অবলম্বনে এগুলোর চিত্রনাট্য সাজানো হয়। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া তার ‘লে সামুরাই’ পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত দুই নির্মাতা জন উ ও কোয়েন্টিন টারান্টিনোকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।