ছোটপর্দার তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি রুকাইয়া জাহান চমক। সাবলিল অভিনয়, মিষ্টি হাসি আর গ্ল্যামার দিয়ে অল্প সময়ে দর্শকের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। একই সঙ্গে বেবাক কথাবার্তা আর ‘চয়েস অব লাইফ’-এর জন্য হয়েছেন চর্চিত। বর্তমানে কেমন আছেন তিনি? কি চলছে তার মনোজগতে? ভবিষ্যত পরিকল্পনাটাই বা কি? এসব নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ
মাসিদ রণ: জীবনে কী চলছে এখন?
রুকাইয়া জাহান চমক: এক কথায় বলতে গেলে, এই মুহূর্তে ‘আই অ্যাম এক্সপ্লোরিং মাইসেলফ’। আমি নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমার উপলব্ধি হয়েছে যে, আমরা এতো দৌঁড়াতে থাকি জীবনের পেছনে, কিন্তু নিজেকে জানতেই ভুলে যাই। আমার কি ভালো লাগে, আমি কোন কাজটি সবচেয়ে ভালো করতে পারি কিংবা কোন কাজটি আমি করতেই চাই না, নাকি জীবনে কিছুই করতে চাই না- এসব নিয়ে ভাববার অবকাশ খুব কম মানুষই পান। এই উপলব্ধি আমার মধ্যে আসার পর নিজেকে বোঝার চেষ্টা করছি।
মাসিদ রণ: নিজেকে বোঝার এই জার্নিটা তো লম্বা। আপাতত নিজের কোন দিকগুলো আবিষ্কার করলেন?
রুকাইয়া জাহান চমক: পেশাগত জীবনের কথাই বলি, আমার মনে হয়েছে যে শোবিজে এসেই অনেক কাজ করে ফেলেছি। এটা আমার বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। পর পর কাজের প্রস্তাব পেয়েছি আর করে গেছি, কিন্তু সব কাজ যে করা ঠিক নয় বা কোন কাজটিকে না বলতে হবে সেটাই বুঝতে পারিনি।
মাসিদ রণ: কিন্তু এটা কখনো মনে হয়নি যে শোবিজে এসেই খুব সিলেক্টিভ কাজ করলে অল্প সময়ে এতোটা পরিচিতি পেতেন না...
রুকাইয়া জাহান চমক: হ্যাঁ, এই পয়েন্টে আপনার সঙ্গে আমি একমত। আমি যদি শুরুতে এসে খুব চুজি হতাম তাহলে আমার সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা তৈরি হতে পারতো শোবিজে, ফলে কাজ পেতেও কষ্ট হতো। তাতে এতো অল্প সময়ে এতো মানুষের কাছে পরিচিতিও পেতাম না। হিন্দিতেও একটা জনপ্রিয় কথা রয়েছে- ‘জো দিখতা হ্যায়, ও বিকতা হ্যায়’।
তাছাড়া এটাও সত্যি যে অনেকের মতো যাত্রার শুরুতে আমার কোন অভিভাবক ছিল না। ফলে কি করলে আমার ভালো হবে, কি করা যাবে না- এসব নিয়ে কেউ আমাকে কোন পরামর্শ দেননি। দিলে হয়তো আরও গুছিয়ে কাজ করতে পারতাম। এই যে আজকে আপনি বেশকিছু কথা বললেন, এই কথাগুলোও যদি আমার ক্যরিয়ারের শুরুতে জানতে পারতাম তাহলে আমার কাছে কিছু বিষয় পরিষ্কার হতো। তবে পুরনো ভুল নিয়ে বসে থাকলে তো জীবনে কিছু ‘ভালো’ যোগ হবে না।
তাই আমি নিজেকে নিজেই বুঝিয়েছি যে, ভুল করতে করতেই তো মানুষ শেখে। আমার ক্ষেত্রেও তাই বলি, মাই লাইফ ইজ অল অ্যাবাউট সামেশন অব সো মেনি বিউটিফুল মিসটেকস। ভুলগুলোকে আমি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি। ফলে ভুল করতে আমি এখন আর ভয় পাই না। আগে খুব ভয় পেতাম যে একটা ভুল করলে মানুষ আমাকে নিয়ে কি ভাববে, সমাজ আমাকে ‘ভালো মেয়ে’ বলবে না। কোন ভুল করলে নিজের প্রতি অনেক কঠোর হতাম। নিজেকে নিজে কষ্ট দিতাম। কিন্তু এখন ভাবি, যদি ভুল করেও ফেলি তা থেকেও ভালো কিছু শিখতে পারবো। মোট কথা এখন আমি নিজের সমস্তটাকে অ্যাকসেপ্ট করতে শিখেছি। তবে আগামীতে যেন একই ভুল আর না হয়, আরও কিভাবে বুঝে শুনে কাজ করা যায় সেদিকটা বিবেচনা করেই পথ চলবো।
মাসিদ রণ: আশেপাশের মানুষ আপনার কাছে কতোটা গুরুত্ব বহন করে?
রুকাইয়া জাহান চমক: এখন আমার মনে হয়, হাজার চেষ্টা করলেও সবাইকে কখনোই খুশি করতে পারবো না। আর যে আমাকে মন থেকে পছন্দ করে সে আমার ছোট-খাটো ভুল ত্রুটি দেখেও এড়িয়ে গিয়ে আমাকে ভালোবাসবে। আপনি কি জানেন? আপন দুই বোনের মধ্যেও হিংসাত্মক মনোভাব থাকে। অতি সম্প্রতি এই সাবজেক্ট নিয়ে বলিউডে ‘দো পাত্তি’ নামে একটি সিনেমাও হয়েছে নেটফ্লিক্সে। শুধু দুই বোন কেন? মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধও হয়েছিলো একই মায়ের পেটের ভাইদের মধ্যে। আপনি ভালো করলে আপনার কাছের বন্ধুটিও জেলাস হতে পারে।
ফলে আশেপাশের সবার কথা গুরুত্ব দিয়ে আপনি যদি থেমে যান তাহলে জীবনযুদ্ধে হেরে যাবেন এটুকু নিশ্চিত। বিষয়টি আমি চিহ্নিত করতে পেরেছি। ফলে আমার কাছে মনে হয়, জীবনে দু-চার জন মানুষ থাকলেই পর্যাপ্ত, যারা আপনার যে কোন পরিস্থিতিতেই আপনাকে কেয়ার করে, ভালোবাসে ও পাশে থাকে।
মাসিদ রণ: নিজেকে নিয়ে নতুনভাবে ভাববার কারণেই কি ইদানিং আপনাকে নতুন কাজে কম পাওয়া যাচ্ছে?
রুকাইয়া জাহান চমক: একদমই তাই। গত মাসে আমার চারটি নাটক মুক্তি পেয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে প্রেমপত্র, মেঘ চায় বৃষ্টি, প্রতিশোধ ও আর একটি নাটক রয়েছে। কিন্তু এগুলো সব বেশ আগেই শুটিং করা। সম্প্রতি কোন নাটকে অভিনয় করিনি। ওই যে বললাম, এখন থেকে খুব হিসেব করে কাজ করবো। যে কাজের গল্প আমাকে টানবে তাই করবো। এখন থেকে ওটিটিতেই বেশি মনোযোগী হব। সম্প্রতি রাফাত মজুমদার রিংকুর পরিচালনায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দীপ্ত প্লে’র জন্য একটি কাজ করেও ফেলেছি। এ নিয়ে এখনই কিছু বলা নিষেধ। সময় হলে বিস্তারিত জানাবো।
মাসিদ রণ: কাজ কমিয়ে দিলে আয় কমে যাবে সেটা ভাবনাতে আসেনি?
রুকাইয়া জাহান চমক: এসেছে, কিন্তু সমাধানও পেয়ে গেছি। এখন আসলে পাবলিক ফিগারদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া খুব ভালো একটা আর্নিং সোর্স হয়ে উঠেছে। গড়পড়তা নাটকে অভিনয় করে আগে যে পরিমাণ আয় করতাম এখন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রোমশনাল কাজ করেই সেটি পাচ্ছি। একটা ব্র্যান্ডের প্রোমশন করলেই লাখের ওপরে সম্মানি দিচ্ছে আমাকে। এছাড়া রিলস করেও ভালো টাকা আয় করা যায়। এইতো কিছুদিন আগেই আমার একটি রিলস থেকে প্রায় ৫০০ ডলার এসেছে। ঘরে বসে অল্প সময়ে একটি রিলস বানিয়ে এই পরিমাণ আয় করাটা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। এজন্যই আমার পছন্দমতো কাজ করার স্বাধীনতা রয়েছে।
মাসিদ রণ: নিজের পছন্দে কাজ করতে গিয়ে ব্যাটে বলে না মিললে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে?
রুকাইয়া জাহান চমক: আশা করছি নিজের পছন্দে ভালো মানের কাজই করে যাবো। তা না হলেও আমি আগের মতো যেনতেন কাজ আর করতে চাই না। আমার লেখালেখি করতে খুব ভালোলাগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার লেখা দেখেছেন হয়তো। ওই দিকেই হয়তো মন দেবো। আসলে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গনে নিজেকে পরখ করে দেখতে চাই। আমি নির্দেশনাও দিয়েছি। আজকাল কোরিওগ্রাফি করতেও ভালো লাগে।