বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন শাফিন আহমেদ। তার গায়কী, উচ্চারন এমনকি ফ্যাশন সেন্স- সবকিছুতেই ছিলো পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। তাইতো ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তরুণদের মাঝে আলাদা প্রভাব বিস্তার করেছিলেন এই গায়ক। মেধা, রূচি ও ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। তাইতো এই শিল্পীর মৃত্যুর পর অন্য তারকারাও তাকে কিংবদন্তি আখ্যা দিচ্ছেন। তবে শিল্পীর আকস্মিক চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছে না শিল্পীসমাজ। শোবিজ অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দেখে নিন তার শেষ বিদায়ে কোন তারকা কি লিখেছেন ফেসবুক ওয়ালে-
নগরবাউল’খ্যাত আরেক কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা জেমস শাফিনের গাওয়া বিখ্যাত গানের কয়েক লাইন লিখে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন, ‘‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি, নও পাহাড়ী ঝর্না, যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল, তোমার তুলনা হয়না’। বিনম্র শ্রদ্ধা-বাংলাদেশের মাইলস ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের প্রতি। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শোকস্তব্ধ দর্শক শ্রোতাদের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা। আসুন আমরা সকলে তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।’’
প্রখ্যাত গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ লিখেছন, ‘শাফিন ভাই এভাবে চলে গেলেন! উনার আত্মার চির শান্তি কামনা করছি।’
রেনেসাঁ ব্যান্ডের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও কম্পোজার নকীব খান লিখেছেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা খবর পাব কখনো কল্পনাও করিনি। আমরা কখনো শুনিনি শাফিন অসুস্থ। আমাদের জন্য তার মৃত্যুর খবর মেনে নেওয়া কঠিন। কিছু বলার ভাষা নেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শাফিনের অনেক কনট্রিবিউশন আছে ব্যান্ড মিউজিকে। সে নিজে গান লিখত, সুর করত, নিজেই গাইত। তিনি কেমন মিউজিশিয়ান ছিলেন তার সবারই জানা। ভালো গিটার বাজানো থেকে শুরু করে সে নিজেই একটা ব্র্যান্ড ছিল। আমাদের মাঝ থেকে থেকে এ ধরনের প্রতিভা চলে যাওয়া এটা আসলে ভাবতে পারছি না। শাফিন আহমেদের মৃত্যু দেশের ব্যান্ড মিউজিক ও ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক বিরাট ক্ষতি। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমরা একসঙ্গে ব্যান্ড মিউজিক করতাম, এক স্টেজে গান থেকে অনেক স্মৃতি। তার মৃত্যু আমাদের জন্য বিশাল ক্ষতি।’
সোলস ব্যান্ডের তারকা ও অভিনেতা পার্থ বড়ুয়া লিখেছেন, ‘এভাবে চলে গেলেন শাফিন ভাই! খবরটা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। আমাদের সম্পর্কটা ছিল আত্মিক। এই মুহূর্তে আর কিছু বলার ভাষা নেই।’
জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা জন কবির লিখেছেন, ‘শাফিন ভাইকে নিয়ে যে কিছু বলব, সেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তার এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। চার দশক ধরে শ্রোতার হৃদয় আন্দোলিত করে আসছে, তাকে তো আমরা এভাবে বিদায় জানাতে পারি না। দেশসেরা এই রকস্টারের প্রতি একটাই অভিযোগ, কেন নিজের শরীরের খেয়াল রাখেননি। শিল্পীজীবন বেছে নিয়েছেন বলে শ্রোতাদের জন্য নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে- এটাও মানতে পারি না। জানি, শাফিন আহমেদ তার কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। তারপরও তার শূন্যতা কখনও পূরণ হবে না।’
সংগীত ব্যক্তিত্ব ও ব্যান্ডদল ফিডব্যাক’র প্রধান সদস্য ফুয়াদ নাসের বাবু লিখেছেন, ‘প্রথম শোনায় বিশ্বাস হয়নি, এখনো মনে হচ্ছে খবরটা হয়ত ভুল হতে পারে। শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছিল তার গান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে ভীষণ শোকাহত।’
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আঁখি আলমগীর লিখেছেন, “প্রথম প্রেমের মত, প্রথম কবিতা এসে বলে, হাত ধরে নিয়ে চলো, অনেক দূরের দেশে’। ভুলবো না শাফিন ভাই। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন। কৈশরের পুরোটা জুড়েই ছিল আপনার গান, আপনাদের গান, মাইলসের গান।’’
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কোনাল একটি খবরের শিরোনামসমৃদ্ধ ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘রেস্ট ইন পিচ, শাফিন ভাই’।
দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না শাফিন ভাই। আমরা আরেকজন কিংবদন্তিকে হারালাম! রেস্ট ইন মিউজিক শাফিন আহমেদ।’
সঙ্গীতপরিচালক শওকত আলী ইমন লিখেছেন, ‘নায়ক মনে পড়বে, কিন্তু কিংবদন্তির কখনোই মৃত্যু হয় না। শাফিন ভাই সব সময়ই আমাদের অন্তরে থাকবেন। রেস্ট ইন পিচ।’
মেধাবী নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত লিখেছেন, ‘রেস্ট ইন পিচ শাফিন ভাই। বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের পথিকৃৎ এবং ওস্তাদ তিনি।’
গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী লিখেছেন, ‘‘নব্বইয়ের শুরুর দিক থেকেই শাফিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কাজ। ‘প্রত্যায়’ অ্যালবামে গান লিখেছি। এছাড়া শাফিন ভাইয়ের সলো অ্যালবামে আমার লেখা অনেক গান রয়েছে। সত্যি কথা বলতে তিনি খুব মজার মানুষ ছিলেন। তার উপস্থিতি সবাইকে মজিয়ে রাখতো। এই মানুষটার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছি। তার জন্য সব সময়ই দোয়া থাকবে। তিনি যেখানেই থাকবেন সৃষ্টিকর্তা তাকে ভালো রাখুক।’
গায়ক মুহিন খান লিখেছেন, ‘এমনিতেই মন ভালো নেই, আপনার খবর শুনে আরো মন খারাপ। বাংলাদেশের গানের আর এক নক্ষত্রের পতন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আপনাকে আজীবন মনে রাখবে। আল্লাহ্ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন, ছুম্মা আমিন।’
সাংবাদিক, গীতিকার ও সুরকার তানভীর তারেক লিখেছেন, ‘কী এক বেদনার্ত সময়ে আপনার বিদায়ের খবরটা পেলাম! ফোন করলেই নানা অভিমানের কথা বলতেন। শাফিন ভাই! আপনিও চলে গেলেন! কত কত স্মৃতি আপনার সাথে! ২৭ বছর ধরে এই শহরে আপনার সাথে কত কত গল্প! দেখা হলেই বলতেন, ‘তানভীর শরীরের যত্ন নাও, মোটা হয়ে যাচ্ছো কিন্তু’। সপ্তাহখানিক আগে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলেন, বললেন, ‘তানভীর। তুমি কি ইউএসএ তে আছো?’ সেই মানুষটা আর নাই! নাই মানে নাই। ক্যারিয়ারে কী অসাধারণ সব গান! কী পরিপাটি তার চলাচল! সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনটা বিষাদে ভরিয়ে দিলেন শাফিন ভাই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
ইমতিয়াজ বর্ষন বলেন, ‘কিংবদন্তির কখনোই মৃত্যু হয় না। শাফিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের সবচেয়ে স্মার্ট স্তম্ভ ছিলেন। আমি সবসময় বিশ্বাস করি শাফিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, আইয়ূব বাচ্চু, জেমসসহ আরও কয়েকজন কিংবদন্তি চিরতরুণ হিসেবে থেকে যাবেন। ফলে এটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর যে তাদের মধ্যে শাফিন আহমেদও আর নেই। শান্তিতে বিশ্রাম করুন কিংবদন্তি।’
প্রবাসী অভিনেত্রী রেহানা রাখি লিখেছেন, ‘কিছুদিন আগে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে শাফিন ভাই গান গাইতে এসেছিল। ওই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা আমার করার কথা ছিল কিন্তু আমি যেতে পারিনি। এত খারাপ লাগছে যে সেই মানুষটা আজ আমেরিকার একটি হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
এছাড়া জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তী, নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ, উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, সঙ্গীতশিল্পী রিপন খান, পান্থ কানাই, আলিফ আলাউদ্দিন, জেফার রহমান, ফারহিন খান জয়িতা, ধ্রুব গুহ, বাঁধন সরকার পূজা, জুয়েল মোর্শেদ, সুমন সাহা, আছিয়া ইসলাম দোলা, তারেক তূর্য্য, অভিনেতা আমান রেজা, রিয়াদ রায়হান, ফারহান খান রিও, মোস্তাফিজ শাহীনসহ অনেক তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রিয় এই শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
১৯৭৯ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। এর কিছুদিন পর এতে যুক্ত হন দুই ভাই- শাফিন ও হামিন। এরপর ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘জন্মদিন’সহ বহু শ্রোতানন্দিত গান উপহার দেন তারা। ব্যান্ডের বাইরেও শাফিনের জনপ্রিয় অসংখ্য গান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার সেন্টারা হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ব্যান্ড সংগীতের জনপ্রিয় এই তারকা।