২১ আগস্ট ২০১৭ সাল। এই দিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান নায়ক রাজ রাজ্জাক। আর পৃথিবীর আলোতে তার আসার তারিখ ছিল ২৩ জানুয়ারি, ১৯৪২ সাল। আজ সেই ২৩ জানুয়ারি। বাংলা চলচ্চিত্রের মুকুটহীন রাজা ছিলেন তিনি। ৮২তম জন্মদিন আজ এই মহাতারকার।
বিশেষ দিন সামনে রেখে টানা তিন দিন তাকে স্মরণে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন চ্যানেল আই।
রোববার (২২ জানুয়ারি) থেকে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখা যাবে অনুষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে রয়েছে- নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত সিনেমা, সিনেমার গান, বিশিষ্টজনের স্মৃতিচারণ, এবং বিশেষ তারকাকথন।
রোববার ‘গান দিয়ে সকাল শুরু’তে থাকবে রাজ্জাক স্মরণে বিশেষ পরিবেশনা। দুপুরে ‘এবং সিনেমার গান’ অনুষ্ঠানে রাজ্জাক অভিনীত সিনেমার গান। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে সিনেমা ‘বড় ভালো লোক ছিল’। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে আবদুর রহমানের পরিচালনা ও উপস্থাপনায় থাকবে রাজ্জাককে নিয়ে ববিতার স্মৃতিকথা ‘অন্তরঙ্গ ববিতা’। ১২টা ৩০ মিনিটে ‘তারকা কথন’-এ রাজ্জাকের স্মৃতিচারণ করবেন সৈয়দ হাসান ইমাম ও রাজ্জাকতনয় সম্রাট। এদিন দুপুর ৩টায় থাকছে সিনেমা ‘অভিযান’।
২৪ জানুয়ারি বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে নায়করাজ পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র ‘আয়না কাহিনি’।
প্রসঙ্গত, নায়ক হয়ে ওঠার পথ মোটেও মসৃণ ছিলনা রাজ্জাকের। অভিনয় জীবনের সূচনা করতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। সিনেমার নায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তাই রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে সিনেমার ওপর ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে এক রাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এক হিন্দু পরিবারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরের দিন ২৬ এপ্রিল পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। তার সাথে ছিল তার স্ত্রী লক্ষী ও পুত্র বাপ্পারাজ এবং পীযূষ বসুর দেওয়া একটি চিঠি ও পরিচালক আব্দুল জব্বার খান ও শব্দগ্রাহক মণি বোসের ঠিকানা।
ঢাকায় এসে কমলাপুরের ছোট্ট একটি বাসায় মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় থাকা শুরু করেন। আব্দুল জব্বারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আব্দুল জব্বার তাঁকে অভিনয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে সুভাষ দত্ত ও এহতেশামের মতো পরিচালকদের সঙ্গে রাজ্জাকের পরিচয় হয়। ১৯৬৬ সালে ‘ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে রাজ্জাকের। ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা।
রোমান্টিক হিরো ছিলেন রাজ্জাক। যার সঙ্গেই জুটি গড়েছেন, সেটাই হিট। রাজ্জাকের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে অভিনেত্রী সুচন্দা, কবরী, ববিতা ও শাবানাকে।
তিনশটিরও বেশি চলচ্চিত্রের নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে অনেক সিনেমা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন। নায়করাজ রাজ্জাক সর্বশেষ তার বড় ছেলে নায়ক বাপ্পারাজের নির্দেশনায় ‘কার্তুজ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও প্রযোজনা এবং পরিচালনাও করেছেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার সম্মাননা পেয়েছেন।