‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননা গ্রহণ করলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন জয়া। দ্য পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (প’) ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পশুপ্রেমীদের প্রতি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠান।
এর আগে চলতি বছর ৪ অক্টোবর সম্মাননাপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করলেও করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় নির্ধারিত হয় চলতি মাসে।
জয়া আহসানসহ মোট ১১ জনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- প্রাণবিক প্রজন্মে মো. আবু বকর সিদ্দিক (পথপ্রাণী উদ্ধারকর্মী), পথে পথে প্রাণ রক্ষায় রাজশাহীর সুধা রানী এবং ঢাকার প্রেসী পুষ্পিতা সরকার। প্রাণবিক প্রাণী চিকিৎসক ডা. ফাতিহা ইমনুর ইমা, গণমাধ্যমে প্রাণবিকতায় প্রবীর কুমার সরকার, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও চিকিৎসায় প্রফেসর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, জনস্বাস্থ্য ও পথপ্রাণী রক্ষায় বেনজির আহমেদ, প্রাণবিক বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল, প্রাণবিক নগর পিতা আতিকুল ইসলাম এবং বিশেষ মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয় রেশাদ কামালকে।
প’ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন হচ্ছে। অনেক মানুষ পশুদের সুন্দর জীবনের জন্য কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই লাইমলাইট থেকে দূরে সরে থাকেন। আমরা তাদের সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই। পশু কল্যাণে তাদের অংশগ্রহণ ও অবদানের জন্যই এ পুরস্কার।”
প্রকৃতি ও পশুপ্রেমী হিসেবে সুখ্যাতি আছে জয়ার। তাই ‘প্রাণবিক তারকা’ বিভাগে তিনি পেলেন এই সম্মাননা। সম্মাননা গ্রহণ করেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন জয়া। জানিয়েছেন বিশেষ একটি দাবি।
প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আমি বিরাট কোনো সম্মাননার যোগ্যতায় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছি, সে রকম করে নিজেকে কখনো ভাবতেই পারিনি। তারপরও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু সম্মাননা আমাকে জানিয়েছেন, তা নিশ্চয়ই তাদের ভালোবাসার জোরে। কিন্তু যে সম্মাননা ‘প ফাউন্ডেশন’ আমাকে দিলেন, সেটা আমার হৃদয়ের একেবারে গভীরের একটা বিষয়ে। তাদের দেওয়া ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননায় আমি অসম্ভব বিহ্বল।”
মানুষ হিসেবে প্রকৃতির সুরক্ষা আমাদের দায়িত্ব। এমনটাই বিশ্বাস করেন জয়া। তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের এ দায় জন্মগত। আমরা সেটি ভুলে যেতে পারি না। আমরা প্রকৃতিকে ছাপিয়ে উঠেছি, কিন্তু প্রকৃতিকে পার হয়ে যাইনি। সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার দায় আমাদের। পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই উপায়—আমাদের রিপু শাসন করে, আমাদের রাক্ষুসে খিদে কমিয়ে পৃথিবীকে সবুজ করে রাখা।”
“কথাটা শুনতে সহজ; কিন্তু এর দায় অনেক বড়, প্রত্যেকের এবং কঠিন। আমার, আপনার, সমাজের, সরকারের, পৃথিবীর বড় বড় করপোরেশনের, বিশ্বনেতাদের। আমাদের কোনো কোনো প্রাণী অরণ্যবাসী। কোনো কোনো প্রাণী নাগরিক, মানুষের মমতার ওদের জীবন বেঁচে আছে। করোনার দুঃসময়ে কুকুরের, বেড়ালের, ঘোড়ার মতো নাগরিক এই প্রাণীদের শোচনীয় দুর্দশা আমরা দেখেছি। আমরা না দেখলে ওরা বেঁচে থাকবে না। এখানে আমাদের দায়িত্ব আছে।”
বেশ কিছুদিন ধরেই অবলা প্রাণীদের প্রতি সংবেদনশীল এই তারকা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন প্রকৃতি ও প্রাণী সুরক্ষায় নতুন একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠার। সে প্রসঙ্গে পুনরায় দাবি জানালেন তিনি, “আমাদের দেশে বাণিজ্যমুখী বনবিভাগ আছে, কিন্তু পরিবেশমুখী, প্রাণীমুখী প্রাণসম্পদ বিভাগ নেই। আমি এটি প্রতিষ্ঠার দাবি করছি।”
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, চিত্রশিল্পী কনক চাঁপা চাকমা, শিল্প সমালোচক মইনুদ্দিন খালেদ।