নানা আয়োজনে উদযাপিত হলো জনপ্রিয় অভিনেতা ও সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব প্রয়াত আলী যাকেরের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর মৃত্যুর পর এটিই প্রথম জন্মদিন-যেখানে তিনি নেই। রাজধানীর বনানীতে এশিয়াটিক সেন্টারে নানা আয়োজনে নানা উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন পরিবার, বন্ধু ও সতীর্থরা।
‘স্মৃতিতে - স্মরণে আলী যাকের’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো সবুজ ও শিল্পের মাঝে আলী যাকেরের নিজের তৈরি কাজের জায়গা – ‘বাতিঘর’র এর উন্মোচন। যেখানে তাঁর গুণমুগ্ধ ও দর্শনার্থীরা স্মৃতি ও শিল্পের আলোকে আলী যাকেরকে খুঁজে পাবেন।
অনুষ্ঠানের দেশের পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আলী যাকেরের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। তাঁরা হলেন– মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী, দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার এবং অভিনেতা ও চিত্রনির্মাতা তারিক আনাম খান।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে-যাতে ফুটে ওঠে আলী যাকেরের কর্মময় জীবন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলী যাকেরের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ও সহকর্মী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, “আমরা নাটক করেছি একসঙ্গে মহড়া দিয়েছি। নাটকের শেষে তার বাড়িতে দীর্ঘ সময় আড্ডা হতো এবং আড্ডা শুধু গল্প গুজব নয়, কবিতা আবৃত্তি হতো, লেখা থেকে পড়া হতো, প্রতিটি আড্ডা ছিলো ওয়ার্কশপের মতো। আমাদের কোন সময় নষ্ট হতো না। এই মানুষটিকে আসলে প্রত্যেকে নানাভাবে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে দেখেছেন।
আমার নাটকের জীবন এবং আমার পেশাগত জীবনে বলতে গেলে তিনি আমাকে গড়ে দিয়েছেন। আমি মঞ্চ নাটকে এসেছি তাঁর হাত ধরে, পেশাগত জীবনেও এসেছি তাঁর হাত ধরে। শুধু এইটুকু বলি আলি জাকের আমরা যারা তার কাছকাছি যেতে পেরেছি তাঁর জীবন, তার কর্ম, তাঁর চিন্তা, সবকিছু আমাদের প্রভাবিত করেছে। আলি জাকের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সেটি তিনি ধারন করেছেন।”
অনুষ্ঠানে আলী যাকেরকে নিয়ে ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আলী যাকেরের স্মৃতি ধরে রাখতে তার সম্পত্তি থেকে গঠিত হয়েছে বিশেষ ফান্ড। যেখান থেকে প্রতিবছর ‘আলী যাকের গ্র্যান্ট’-অর্থাৎ অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান আলী যাকেরের স্ত্রী ও নন্দিত অভিনেত্রী সারা যাকের। তিনি বলেন, “আজকে আমরা আলি যাকের গ্র্যান্ট ঘোষণা করছি। উত্তরাধিকার সূত্রে আলী যাকের যা কিছু রেখে গিয়েছেন তাঁর সন্তানদের জন্য। সেই সন্তানরা তাদের সম্পত্তি থেকে কিছু দিয়েছেন। আর এ কারণে আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই গ্র্যান্টের মাধ্যমে আমরা একটা ফান্ড করবো। সেই এনডওমেন্ট ফান্ড দিয়ে আমরা প্রতি বছরে তিনটা নতুন নাটকের প্রযোজনা ফান্ড করবো। আর সেটি নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকেই হবে। আর একটি হলো নাট্যকলা বিভাগে যে ছেলেটি বা মেয়েটির একটা স্বপ্ন তৈরি হয় আর সেটি আমরা নিরীক্ষা করে দেখে তাদের সেই কাজটিকে আমরা ফান্ড করবো। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে নাট্যকলা বিভাগে যিনি চেয়ারপারসন তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আর আমার কথা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের চ্যান্সেলরের সঙ্গে যে আমরা মিডিয়া স্টাডিজেও একটা গ্র্যান্ট দেবো। তবে এখন ছোট পরিসরে। আমি আশা করছি এতো বড় একটা কর্মযজ্ঞ আছে সেটা চলমান থাকবে।”
অনুষ্ঠানে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেন নিমা রহমান, মোরশেদ আলম, মামুনুর রশীদ সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও, জুমের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন আলী যাকেরের বন্ধু, সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। অতিথিরা বাতিঘর ঘুরে দেখেন এবং আলী যাকেরের তোলা ছবির বিশেষ প্রদর্শনী উপভোগ করেন।
আলী যাকেরের জীবন ও কাজ নিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতিপ্রেমী, বিশেষ করে তরুণদের ধারণা দিবে ‘বাতিঘর’। বাতিঘর এশিয়াটিক সেন্টারে (৭বি, এইচ ব্লক, বনানী, ঢাকা) অবস্থিত। আগ্রহীরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আলী যাকেরের ভূমিকা; সাহিত্য, চিত্রকর্ম ও সঙ্গীত নিয়ে তাঁর ভাবনা ও ভালোবাসা; এবং তাঁর ব্যক্তি ও পেশাগত জীবন নিয়ে জানতে চাইলে বাতিঘর ঘুরে আসতে পারবেন।
এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি’র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।