রাত পোহালেই রংপুরের ৬ আসনে ভোট

, নির্বাচন

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2024-01-06 21:19:00

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৬টি আসনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণে নির্বাচনী সকল সরঞ্জামাদি সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন শুধু ভোটের জন্য অপেক্ষা।

আগামীকাল রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এর ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার কার্যক্রম শেষ করার নিয়ম মেনেই শুক্রবার সকাল ৮টায় সারাদেশে সব ধরনের প্রচারের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়েছে। এর পরও নানাভাবে অনানুষ্ঠানিক প্রচার এবং পোলিং এজেন্ট চূড়ান্তকরণে প্রার্থীরা ব্যস্ত রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৮টায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেউ আইন না মানলে ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। কমিশন চাইলে কারও প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

রংপুর-১ (গংগাচড়া ও রংপুর সিটির ১ থেকে ৮ নং ওয়ার্ড) আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা ‘ট্রাক’, গংগচড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র আসাদুজ্জামান বাবলু ‘কেটলি’, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বখতিয়ার হোসেন ‘হাতুড়ি’, তৃণমূল বিএনপির বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘সোনালী আঁশ’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাবিবুর রহমান ‘আম’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শ্যামলী রায় ‘ডাব’, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন ‘মোড়া’ এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহীনুর আলম ‘ঈগল’ প্রতীকে লড়ছেন।

এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ২১৯ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৫ জন, পুরুষ ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ এবং হিজড়া ভোটার ২ জন রয়েছে। এখানকার ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের ৬৬৬টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভোটযুদ্ধে এ আসনে ৯ জন নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকলেও মূলত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘কেটলি’ ও ‘ট্রাক’ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন তিনজন প্রার্থী। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কামাল মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’, আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ সরকার ‘ট্রাক’ এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মণ্ডল পেয়েছেন ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে লড়ছেন।

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৩, পুরুষ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮৫ এবং হিজড়া ভোটার রয়েছে ৪ জন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ১৩৬টি ভোটকেন্দ্রের ৮১৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হলেও সাধারণ ভোটারদের চোখে সম্ভাবনার তীর লাঙ্গলের দিকে।

রংপুর-৩ (সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের ৯ থেকে ৩৩ নং ওয়ার্ড) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু ‘একতারা’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক ‘ডাব’, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম ‘মশাল’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম ‘আম’ এবং তৃতীয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী ‘ঈগল’ প্রতীকে লড়ছেন।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডলকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ভোটযুদ্ধে এ আসনে জিএম কাদেরসহ ৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সাধারণ ভোটারদের কাছে ‘লাঙ্গল’ ও ‘ঈগল’ রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলোচনায়।

এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৮ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৪ জন ও পুরুষ ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭২ এবং হিজড়া ভোটার ২ জন। রংপুর জেলার সবচেয়ে বেশি ভোটার অধ্যুষিত এ আসনের ১৭৫টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৬টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে ভোটাররা।

রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল ‘লাঙ্গল’ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের সিরাজুল ইসলাম ‘ডাব’ প্রতীক পেয়েছেন। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে নৌকা-লাঙ্গলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৩ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩০ জন ও পুরুষ ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯ এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের ১৬৩টি ভোটকেন্দ্রের ৯৭৭টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমান দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির আনিছুর রহমান ‘লাঙ্গল’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুবুর রহমান ‘ডাব’, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল হালিম মণ্ডল ‘গামছা’, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত এনামুল হক ‘চেয়ার’, সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার ‘ট্রাক’, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া ‘একতারা’ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) আব্দুল বাতেন পেয়েছেন ‘টেলিভিশন’ প্রতীক।

ভোটযুদ্ধে এ আসনে ‘নৌকা-লাঙ্গল-ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের পুত্র রাশেক রহমান এবার ‘নৌকা’ প্রতীকে লড়ছেন।

এখানকার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রের ৯৯০টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৩৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৯৮৪ জন, পুরুষ ২ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৭ এবং হিজড়া ৪ জন ভোটার রয়েছে।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ‘নৌকা’, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুর আলম যাদু মিয়া ‘লাঙ্গল’, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হুমায়ুন ইজাজ ‘আম’, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জাকারিয়া হোসেন ‘হাতঘড়ি’, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহবুল আলম ‘ডাব’, আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ‘ট্রাক’ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। 

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৫৪ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৮ জন ও পুরুষ ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৫২ এবং হিজড়া ভোটার ৪ জন। এ আসনের ১১১টি ভোটকেন্দ্রের ৭১২টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নৌকা বিজয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লাঙ্গলের পাশাপাশি আলোচনায় আছেন

মোট ভোটার ও প্রার্থী

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, বর্তমানে রংপুর-১ আসনে নয়জন, রংপুর-২ আসনে তিনজন, রংপুর-৩ আসনে ছয়জন, রংপুর-৪ আসনে তিনজন, রংপুর-৫ আসনে আটজন এবং রংপুর-৬ আসনে সাতজনসহ মোট ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তিনি আরও জানান, জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ জন। পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ এবং হিজড়া ২৪ জন ভোটার রয়েছে। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫ হাজার ১৭৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন নির্বাচন কমিশন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর