অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, `যেসব ভাল ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারেননি আগামী ১ মে থেকে তারা মোট ঋণের দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকি টাকা ১২ বছরে পরিশোধের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে সুদের হার চক্রবৃদ্ধি না হয়ে, সাত শতাংশ হারে সরল সুদ দিলেই হবে। যারা আগে ১০, ১২ বা দুই ডিজিট সুদে ঋণ নিয়েছেন, সেটা তাদেরকে দিতে হবে না।’
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর শেরে বাংলানগরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২০১৮ সালের মার্চে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখতকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দেন। কিন্তু নির্বাচনের কারণে সেই কাজ শেষ করা যায়নি। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার সংশ্লিষ্ট বৈঠকে বসেছিলেন মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ভালো ঋণগ্রহিতাদের সুদের হার কমিয়ে দিচ্ছি। তাদের ডাউন প্যামেন্ট হবে দুই শতাংশ। তাদের যা ঋণ আছে, সেই ঋণ থেকে তারা দুই শতাংশ পরিশোধ করবে। বাকি যে অ্যামাউন্ট (ঋণ) থাকবে, সেটার উপরে সাত শতাংশ সুদ নেব, সুদ চক্রবৃদ্ধি দিতে হবে না।। তাদের ১২ বছর সময় দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছি, শেষ করতে সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগবে। কিন্তু এটা কার্যকর হবে ১ মে থেকে। ঋণগ্রহিতাদের মধ্যে কেউ ভালো, কেউ অসাধু। যারা ভালো ঋণগ্রহিতা তাদেরকে সুযোগ দেব আর অসাধুদেরকে এই সুবিধা দেওয়া হবে না।
মন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল (এক) ডিজিটের হবে, এটা এতোদিন করতে পারিনি। এখন সিঙ্গেল ডিজিট নিজেরাই করে দিচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা খারাপ ঋণগ্রহিতা, তাদের রেকর্ড তো আছে। কারা ভালো আর কারা অসাধু ঋণগ্রহিতা, সেটা বের করার জন্য একটা স্পেশাল অডিটের ব্যবস্থা করেছি। এটা কাজ শুরু হবে। সেখান থেকেও জানতে পারব, কারা ভালো আর কারা খারাপ।’
তিনি বলেন, ‘মনে করেন টাকা নিলাম, ১০ বছরে এক টাকাও দিলাম না, তাহলে আমি কি ভালো? কিংবা ১০ বার রফতানি করলাম, কিন্তু একবারও ব্যাংকে টাকা জমা দিলাম না, তাহলে কি আমি ভালো?’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কখনও তারা যদি মনে করে, সুদ করে চলে যাবে, সেই ব্যবস্থাও রেখে দিয়েছি। যদি মনে করি, এখন তাদের লেনদেন ভালো, স্ট্যাটিক ভালো- সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে নতুন করে একই ব্যাংক থেকে তাদেরকে ঋণ দেব। তাদেরকে অ্যাক্সিট (ঋণ থেকে বাইরে) দেওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা করছি। আমাদের দেশে অ্যাক্সিটের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।’
নতুন ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যারা আসবে, তাদের জন্যও আমরা সুদের হার কমিয়ে দেব। একটা বাজারভিত্তিক সুদ হবে। সুতরাং সেটার ভিত্তিতে কেউ-ই লস করবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরপর যারা এই সুবিধা নিতে পারবে না; একেবারেই টাকা পরিশোধ করতে পারবে না, তাদের জন্যও ব্যবস্থা আছে। আমরা অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি করব। আমাদের ইনসলভেন্সি আইন তৈরি হচ্ছে। এই আইনের আওতায় নন-পারফর্মিং ঋণগুলো, সব ঐ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে। তারা এগুলো পাবলিক টেন্ডার দিয়ে বিক্রি করে যা পাবে, তা সরকারকে দেবে।’