প্রস্তাবিত তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের ভাগ্য নির্ধারণ হবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। আর চতুর্থ ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের আগে প্রাক সমীক্ষা করার কথা নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বার্তা২৪.কমকে বলেন, পায়রা এলাকায় প্রস্তাবিত চতুর্থ টার্মিনালের বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মাণ করতে খরচের বিষয় রয়েছে, আবার নাব্যতার ইস্যু জড়িত। ভাসমান টার্মিনালটি দিয়ে কতটুকু গ্যাস আসবে অর্থনৈতিকভাবে সফল হবে কিনা, আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। যদি অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবেই টার্মিনালটি করা হবে।
বর্তমানে দেশে দুইটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল চালু রয়েছে। একটি পরিচালনা করছে এক্সিলারেট আরেকট সামিট গ্রুপ। প্রস্তাবিত তৃতীয় (মহেশখালী) ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) নির্মাণের জন্য সামিট গ্রুপের সঙ্গে বিশেষ আইনে চুক্তি করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যদিকে চতুর্থ (পায়রা) টার্মিনালও বিনা দরপত্রে দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে টার্মশিট সই করেছিল সরকার। চুক্তিতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা ওই টার্মশিটে উল্লেখ ছিল। বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করাতে গত সপ্তাহে এ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি এক্সিলারেট এনার্জিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
এক্সিলারেট এনার্জি মহেশখালীতে বর্তমানে একটি ভাসমান টার্মিনাল পরিচালনা করে আসছে। ওই টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কোম্পানিটি পায়রাতে আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল করতে যাচ্ছিল।
অন্যদিকে কোন রকম দরপত্র ছাড়া বিশেষ আইনের আওতায় চলতি বছরে ৩০ মার্চ সামিট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল খসড়া চুক্তি অনুমোদন করে।
চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল চালুর পর থেকে ১৫ বছর মেয়াদে দৈনিক ৩ লাখ ডলার (চুক্তিতে উল্লিখিত বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ) রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ পাওয়ার কথা ছিল সামিট গ্রুপের। টার্মিনালটির ১৫ বছরে মেয়াদে রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ বাবদ সামিট গ্রুপকে দিতে হতো প্রায় ১৭ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা (ডলার ১১০ টাকা হারে)। যা গত অক্টোবর মাসে বাতিল করে দিয়েছে পেট্রোবাংলা। যদিও সামিট গ্রুপ এ বিষয়ে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে। বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। দেশীয় এসব উৎস থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক কমবেশি ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানি থেকে ৯০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশের কম আমদানিতেই গড় দর ৬.০৬ টাকা থেকে বেড়ে ২৪.৩৮ টাকা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্পর্ট মার্কেট থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছিল ৬৫ টাকা, যা আগস্টে (২০২৪) ৭১ টাকায় কিনতে হয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ আমদানি করতে ত্রাহী অবস্থা, সেই সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো। ১৭ নভেম্বর ১৯৫২ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হয়েছে। দশদিন আগেও যা ছিল ১৯৭২ মিলিয়নে।
পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন বলছে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা ৪৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। যদিও কেউ কেউ বলতে চান এখনই গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা সাড়ে ৪ হাজারের মতো। তড়িৎ ঘাটতি মোকাবিলায় বিকল্প কম থাকলেও এলএনজি আমদানিকে বিপদজনক বিকল্প মনে করেন অনেকেই। দেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কয়েক দশকের স্থবিরতার জন্যই আজকের করুণ পরিণতি মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।