সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল’র বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-08-28 11:18:20

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে নতুন পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে থাকাকালে স্বজনপ্রীতি, কর্মকর্তাদের হয়রানি, নিয়মবহির্ভূতভাবে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়ে কমিশন গ্রহণ ও নারীঘটিত কেলেঙ্কারির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটির সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা নতুন করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ডা. মো. রেজাউল হকের ফিরে আসাকে ‘অশনিসংকেত’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

তারা বলেছেন, সাবেক চেয়ারম্যানের ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটিতে নানা গুঞ্জন চলছে। ২০১৭ সালে এই সাবেক চেয়ারম্যানের অপসারণের পর ব্যাংকটির যেসব কর্মকর্তা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন, তারা এখন ‘আক্রোশের শিকার হওয়ার ভয়ে’ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

ভুক্তভোগীদের কয়েকজন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হক দায়িত্বে থাকার সময় নির্বিচারে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের হয়রানি ও পদোন্নতি বঞ্চিত করেছেন। অপরপক্ষে তার ফরমায়েশ বা হুকুমের গোলামি করা কর্মকর্তাদের একই সঙ্গে দুই ধাপ পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন নির্দ্বিধায়। ভয়ে কেউ তার ওই সব অপকর্মের কোনো প্রতিবাদ করতেন না।

২০১৭ সালে ডা. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ব্যাংকটির তৎকালীন কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন, চেয়ারম্যান তার প্রভাব খাটিয়ে আস্থাভাজনদের দিয়ে বড় ঋণ ছাড় করানোর সময় মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন। এ ছাড়া ব্যাংকের টাকা খরচ করে লন্ডনপ্রবাসী স্ত্রী-সন্তানদের দেখতে তিনি প্রতি মাসে একাধিকবার সেখানে যেতেন। তার বিরুদ্ধে তখন ২০০ কোটি টাকার অনিয়ম ও পাচারের অভিযোগ করা হয়েছিল ব্যাংকটির পক্ষ থেকে। এ সংবাদ তখন দেশের একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হক নারী সহকর্মীদের নানা কৌশলে কুপ্রস্তাব মানতে বাধ্য করেছেন। তারা বলেন, অনেক মেধাবী নারী ব্যাংকার তার কুপ্রস্তাবের কারণে ব্যাংকটি ছেড়ে চলে গেছেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেন ব্যাংকটির সাবেক দুই কর্মকর্তা নাজমুস সাদাত ও হুমায়ুন কবির। এই দুই সহযোগী নারীলিপ্সু সাবেক চেয়ারম্যানের চাহিদামতো নারী কর্মকর্তাদের কুপ্রস্তাব দেওয়া ও তা মানতে বাধ্য করতেন। এ ছাড়া নানা সময়ে বাইরে থেকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে নারী সরবরাহের কাজও তারা করতেন।

অভিযোগ আছে, সে সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক চেয়ারম্যান তার অফিস কক্ষকে একটি মিনি গেস্ট হাউসে পরিণত করেছিলেন।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে নাজমুস সাদাত ইভিপি হিসেবে প্রিন্সিপাল শাখায় থাকার সময় বেশ কিছু ঋণ ও বিনিয়োগে অনিয়ম করেন বলে অভিযোগ আছে। আর সে কারণেই তাকে মানবসম্পদ বিভাগে সংযুক্ত রাখা হয়। এ ছাড়া তিনি রাজধানীর কাকরাইলে ব্যাংকটির একজন ঋণগ্রহীতার সঙ্গে গোপনে ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, যা চাকরি বিধির পরিপন্থী। পরে শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে তাকে চূড়ান্তভাবে চাকরি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া সাবেক চেয়ারম্যানের সহযোগী ব্যাংকটির অপর কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আওয়ামী লীগের মিরপুর থানা শাখার একটি দলীয় পদে থাকার সুবাদে সহকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চলতেন। সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে কেউ এই দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বাড়াবাড়ি করতেন না।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সমন্বিত আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এরপর নোবেল বিজয়ী প্রখ্যাত বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশে সার্বিক সংস্কারের কাজে হাত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের সংস্কার শুরু করে গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষায় ব্যাংকগুলোতে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এ সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো হয়রানি ও বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা।

গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে আগের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে পাঁচজন পরিচালক নিয়োগ দেয়। এ সময় নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হক।

পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অপর চারজন হলেন- যথাক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংক পিএলসির সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আনোয়ার হোসেন। এই চারজনের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর