না.গঞ্জে জাইকার অর্থায়নে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল

বিবিধ, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 03:42:31

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় গড়ে তোলা হবে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল। প্রথম ধাপে ৫০০ একর জমির ওপর এই অঞ্চল গড়ে উঠলেও পরবর্তীতে আরো ৫০০ একর যোগ করা হবে। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেই এ প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা গেছে, বেজার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্প সম্প্রসারণের আওতায় জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগসহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একজন প্রকল্প পরিচালক ও একজন উপ-প্রকল্প পরিচালকসহ প্রশাসনিক পদের জন্য প্রাথমিকভাবে মাত্র ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রকল্পের ডিপিপি শিগগিরই অর্থ বিভগের জনবল নিয়োগ মিটিংয়ে উত্থাপন করা হবে।

আরো জানা গেছে, এ পকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৮২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা অর্থায়ন করবে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বাকিটা সরকার অর্থায়নে হবে। ২০১৮ সাল ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা আছে, যা শেষ হবে ২০২২ সালে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছর থেকে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন এ দেশে জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। এখন বিভিন্ন জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে।’

ডিপিপি অনুসারে এই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমির উন্নয়ন নিশ্চতকরণ, প্রবেশ পথ তৈরি, অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাল ও পুকুর খনন, বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ ও টেলিকমিউনিকেশন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে জাপানের সজিত করপোরেশন এক হাজার একর জমি বরাদ্দ চেয়েছে। আর কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় আরো এক হাজার জমি চেয়েছে জাপানের নতুন আরেকটি কোম্পিানি। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও মুনাফা পরিস্থিতি নিয়ে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানি ছিল ৭০টি, ২০১৬ সালে ২৪৫টি এবং ২০১৭ সালে ২৬৯টি। ২০১৭ সালে জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এক হাজার ১৩০ কোটি জাপানি ইয়েন বা ৮৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, যার ৮৭ শতাংশই মূলধন। আর ২০১৬ সালে এ পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৯০ কোটি ইয়েন বা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি জাপানি হোন্ডা মোটর করপোরেশন বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৫ একর জমিতে কারখানা স্থাপন করেছে, যেটি চলতি বছরেই উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কোম্পানিটি বাংলাদেশে মোট ৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৩৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।

জাপান টোব্যাকো গত জুনে বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কিনে নিয়েছে। যেখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বা ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। জাপানের নিপ্পন স্টিল অ্যান্ড সুমিতমো মেটাল বাংলাদেশের ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রোডাক্টসের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইস্পাত কারখানা স্থাপন করতে চায়।

বাংলাদেশের সামিট করপোরেশনের ২৪ হাজার কোটি টাকার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে মিতসুবিশি করপোরেশন। আর মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইয়ামাহা চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি কারখানা স্থাপন করতে চায়। এর বাইরে জাপানের বেশ কয়েকটি কোম্পানি আবদুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর