‘নির্বাচনের প্রভাব পোশাক খাতে, কমেছে বিক্রয়াদেশ’

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 16:25:43

দেশের পোশাক খাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জারা ফ্যাশন জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম মেহেদী হাসান রানা। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পোশাক খাতে অর্ডার বা বিক্রয়াদেশ কমতে শুরু করেছে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে নির্বাচনের পর অর্ডার বাড়বে বলে আশা করি।’

সম্প্রতি দেশের পোশাক শিল্পের বিভিন্ন দিন নিয়ে বার্তা২৪.কম’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মেহেদী হাসান রানা রাজনীতিবীদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে করেই হোক পোশাক শিল্পকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে। আর এমন কিছু করা উচিত না যাতে পরিস্থিতি অশান্ত হয়। কার দেশের পরিস্থিতি অশান্ত হলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেন।  ফলে সামগ্রীকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’

বিদেশি প্রতারক ক্রেতাদের বিষয়ে মালিকদের সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমি গত ২৬ বছরে বিদেশি প্রাতারক ক্রেতাদের ফাঁদে পড়ে অনেক মালিকে নিঃস্ব হতে দেখেছি। এমনকি আমার কারখানাও এক আমেরিকান প্রতারক ক্রেতার ফাঁদে পড়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এক্ষেত্রে বিদেশি প্রতারক ক্রেতাদের তালিকা করতে পারে সরকার ও বিজিএমইএ। ওই তালিকা সব কারখানা মালিক ও ইমিগ্রেশন বিভাগে দিয়ে দেওয়া উচিৎ যাতে প্রতারকরা আর এদেশে প্রবেশ করতে না পারে।’

ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর বিষয়ে জারা ফ্যাশনের  এমডি বলেন, ‘কারখানার মালিকরা বিপাকে পড়লে মুখ ফিরিয়ে নেয় ব্যাংকগুলো। কারণ তারা তেলা মাথায় তেল দিতে পছন্দ করে। ফলে সবসময় বড় কারখানাগুলোকেই ঋণ দেয় তারা। তাছাড়া সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক সেটা মানে না। এমনকি নতুন উদ্যোক্তাদেরও আর্থিক সহায়তা দিতে চায় না ব্যাংকগুলো। এসব বিষয়ে সরকার ও বিজিএমইএ‘র নজর দেওয়া উচিত। তা নাহলে ছোট ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ খাতের উদ্যোক্তারা বারবার পণ্যের দাম বাড়ানোর তাগিদ দিলেও বিদেশি ক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছে না। আমি ১২ বছর আগে যে প্যান্ট ১২ ডলারে বিক্রি করতে দেখেছি এখনও একই দামে বিক্রি করা হয়। কিন্তু মালিকরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে সবাই অনুসরণ করে তাহলে ন্যায্য মূল্য আদায় করা সম্ভব। তবে আগে কারখানা মালিকদের অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ক্রেতাদের সাথে যুক্তি দিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হবে না।’

পোশাক শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি আট হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত মালিকদের ওপর বোঝা। এর আগে যখন নূন্যতম মজুরি পাঁচ হাজার তিনশ টাকা করা হয় তখনও মালিকদের সেটা দেওয়ার সক্ষমতা ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু আমরা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফলে অতীতেও আইন মেনেছি, ভবিষ্যতে মেনে চলবো।’

জারা ফ্যাশনের এই কর্ণধর বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অনেক এগিয়েছে। কিন্তু এখনো আন্তর্জাতিক ব্রান্ডিং করার সময় আসেনি। এটা করতে পুরো পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকা দরকার।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর