কে কতদিন কোয়ারেন্টাইনে কাটাবেন?

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

সৈয়দ ইফতেখার | 2023-08-31 11:01:18

গণহারে রাজধানী ঢাকায় ঢুকছে মানুষ। যে স্রোতে ঈদের আগে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন সবাই, ফেরার স্রোত তার থেকেও বেশি মনে হচ্ছে। হবেই তো, কারণ- ছুটি শেষ। দীর্ঘ ছুটির সময় ধাপে ধাপে যারা ছেড়েছিলেন ঢাকা, তারা এখন এক সাথে শহরে প্রবেশে মরিয়া।

সংবাদ পড়লে বা দেখলে একে এক প্রতিযোগিতা বলে মনে হয়। ফেরির গাদাগাদি দেখে সামাজিক দূরত্ব বলে কোনো শব্দ যে আছে, তা নিয়েই মনে সন্দেহ জাগে! অথচ পরিস্থিতি এমন হওয়ার কথা ছিল না। কতগুলো ব্যবস্থা নিলাম আমরা, কিন্তু শেষ সময়ে এসে দিলাম লাগামের দড়িতে ছাড়।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছি আমরা এখন। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস ডিজিজের যে বিস্তার ঘটেছে সারা বাংলায়, তার সর্বোচ্চ পরিণতি বর্তমান সময়টায় ভোগ করতে হচ্ছে। এ সর্বোচ্চ সময়ে এসেই সব উন্মুক্ত করে দিলাম। ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি, পথে-ঘাটে চেক পোস্ট শিথিল করা, দোকানপাট-মার্কেট খুলে দেয়াসহ কতভাবেই না আমরা ভাইরাসকে আরও বাড়তে দিলাম। এখন আবার ঈদের পর এলো সব কিছু স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গ। সরকারি ও আধা-সরকারি কার্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে এখন থেকে। আর শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ছুটি। পর্যায়ক্রমে খুলবে সেগুলোও। এমনকি স্বল্প যাত্রী নিয়ে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বাস, লঞ্চ ও রেল চলাচল করার কথাও বলা হয়েছে।

এখন যখন গড়ে হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন আর মারা যাচ্ছেন ২০/২৫ জন করে, তখন এ সিদ্ধান্তের কারণে কি সংক্রমণ আরও বাড়বে না! হুমড়ি খেয়ে পড়বে না মানুষ রাস্তাঘাটে, কর্মক্ষেত্রে! এতো দিনের জমে থাকা কাজ সেরে নিতে প্রতিষ্ঠানগুলো থোরাই কেয়ার করবে স্বাস্থ্যবিধির। এতে করে আমাদের জন্য যে অতল অন্ধকার অপেক্ষা করছে না, তা কে বলতে পারে।

মঙ্গলবার (২৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, মানুষজন বিভিন্ন জেলায় ঈদ উদযাপন করে ঢাকায় ফিরছেন। তারা কর্মক্ষেত্রে যোগ দেবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই যেন স্বাস্থ্যবিধি মানেন তারা। মাস্ক পরার পরামর্শ দেন তিনি। দীর্ঘ ভ্রমণের পর এখন আর কোয়ারেন্টাইনের (সঙ্গরোধের) প্রশ্ন তোলেননি তিনি। আর আমরাও দিব্যি ভুলে গেছি এ কথা। অথচ প্রথম দফায় যখন মার্চের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, তখন সে ছুটি ১০/১১ দিনের ছিল। পরে তা বাড়িয়ে বলা হলো যারা গ্রামের বাড়ি গেছেন, অবশ্যই যেন ১৪ দিনের সঙ্গরোধে থাকেন। মধ্য মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে, সঙ্গরোধের মেয়াদ শেষ করা বাধ্যতামূলক। শেষে যা দাঁড়ালো ৩১ মে পর্যন্ত ছুটি। কয়েকদিন আগ পর্যন্ত সঙ্গরোধ নিশ্চিত করার কথাই বলছিল সংস্থাটি। এখন তারাই ভিন্ন সুরে বক্তব্য দিচ্ছেন।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সঙ্গরোধের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, সাধারণভাবে সুস্থ মনে হওয়া মানুষদের জন্য সঙ্গরোধ। সে যদি ভ্রমণ করে থাকে কিংবা করোনা পজেটিভ রোগীর সঙ্গে কোনোভাবে মেশে, তাহলে প্রথম কাজ নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলা। এতে জীবাণু ছড়াবে না। উপসর্গ প্রকাশের আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। এটাই কোয়ারেন্টাইন বা সঙ্গরোধ। কারণ আমরা জানি, এ রোগ তিনগুণ দ্রুত গতিতে ছড়ায়। আর আইসোলেশন নিয়ে বলা হচ্ছে, জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়েছে বা উপসর্গ বিদ্যমান, এমন ব্যক্তিকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই আইসোলেশন। সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য আর কোয়ারেন্টাইন সুস্থ বা আপাত সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য। সে অর্থে ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষজনকে অবশ্যই ঢাকায় ঢুকে কমপক্ষে ১৪ দিন সঙ্গরোধে থাকতে হবে। কে কতদিন সঙ্গরোধে কাটাবেন- এ প্রশ্ন উঠছে না কেন এখন? খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সরকার যেখানে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে, দিয়েছে অবাধ চলাফেরার সুযোগ, সেখানে এ প্রশ্ন করাটাই অবান্তর।

এতো ছুটি দেয়া সম্ভব হলো, আর একটা মাস প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে কি এমন ক্ষতি হতো! যাক করোনা যতই ছড়াক, সব কিছু স্বাভাবিক আমরা করবই। সচেতনতা বিষয়টি করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক লকডাউন এলাকাগুলোতেই আমরা দেখিনি, আর সব কিছু খুলে দেয়ার পর এটা আশা করাটা বিড়ালের কাছে মাছ পাহারা দেয়ার মতোই শোনায়!

ছোট্ট একটা গল্প বলে শেষ করি। এক পরিচিতজন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন। বিষয়টা জানেন না তার কর্মক্ষেত্রের অনেকেই। ফিরে তিনি ঠিকই অফিসে যোগ দিয়েছেন। অথচ আসতে-যেতে দুইবার তাকে পার হতে হয়েছে ফেরি! আর নিজ গ্রামে গিয়েও তিনি সঙ্গরোধে থাকেননি, ঢাকায় এসেও ঘুরছেন খোলামেলা। ধরলাম তার কিছু হয়নি। না হোক তাই চাই। কিন্তু এমন শত শত মানুষ আছেন আমাদের চারপাশে। তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনের করোনাভাইরাস থেকে থাকলে, তা কত শত শত মানুষকে আক্রান্ত করবে বলুন তো? তাই তো করোনা এখন প্রতিরোধ নয়, নিয়তির হাতে। আলোকচিত্রী সুদীপ্ত সালামের ভাষায় বলি, সব খুলে দাও, শুধু বন্ধ করে দাও বাঁচার পথ!

সৈয়দ ইফতেখার: লেখক, সাংবাদিক।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর