বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসে গ্রেফতার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে গ্রেফতারের পর প্রশ্নফাঁসে তার স্বীকারোক্তি, লেবাস ও অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ আল্লাহর রাস্তার দান করা নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। তাকে বাটপার আখ্যায়িত করে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন ধার্মিকরা বাটপার হয় না, বাটপাররাই ধার্মিক সাজে।
এখানে কয়েকটি শব্দ নিয়ে আগে আলোচনা করবো। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কী বলা আছে এবং ইসলামে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
ধর্ম শব্দটির আভিধানিক অর্থ, ‘যা ধারণ করে।’ ধৃ ধাতু + মন্ (প্রত্যয়) মিলেই ধর্ম । ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা। তাহলে ধর্ম অর্থ যা দাঁড়ায় তা হলো, মানুষের হৃদয় বা মন যা ধারণ করে তাই-ই ধর্ম। অর্থাৎ বাইরের লেবাস ধর্ম নয়।
বাটপাররা বাটপারি করতে গেলে একটি বিশ্বাসযোগ্যতার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে তারা লেবাসকে ব্যবহার করে। এতে করে বাটপারি করার পথ সহজ হয়। এতে করে প্রকৃত ধার্মিকরা বিব্রত হন। কেননা শার্ট-প্যান্ট, স্যুট পরে দুর্নীতি করলে কেউ পোষাকের দোষ দেয় না, কিন্তু জুব্বা-পাঞ্জাবী পরে দুর্নীতি করলে পোষাকের দোষ হয়।
বাটপার শব্দের অর্থ - প্রতারণা করা, ডাকাত, লুটেরা, চোখের উপর যে চুরি করে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে চোরের উপর বাটপারি। অর্থাৎ বাটপাররা চোর থেকেও ভয়ংকর। বাংলা একাডেমির সহজ বাংলা অভিধানের ২৬৬ পৃষ্ঠায় বাটপার অর্থ বলা আছে প্রতারক, ঠগ, লুটেরা।
ধর্ম সংস্কৃত শব্দ। আরবিতে ধর্মকে ‘দ্বীন’ বলা হয়। ইসলামি শরিয়াতে পরিভাষায় ‘দ্বীন’ হলো এক আল্লাহ তায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে তাকওয়া ও পরহেজগারিতা অর্জন করাকে ‘দ্বীন’ বলে।
ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ তথা হারাম। প্রতারণার বিষয়ে ইসলাম খুবই কঠোর। একাধিক হাদিসে হযরত মুহম্মদ (স.) বলেছেন, ‘যে আমাদের ধোঁকা দেয় তথা প্রতারণা করে সে আমার উম্মতের দলভূক্ত নয় (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) ।
প্রশ্নফাঁস না হলে হয়তো ওই চাকুরিটি অন্যজনের হতে পারতো। সেক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস অপরাধটি হলো হক্কুল ইবাদ বা বান্দার অধিকার হরণের শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ভয়ংকর এক অপরাধ। যে অপরাধ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষমা না করলে স্বয়ং আল্লাহও ক্ষমা করেন না।
প্রশ্নফাঁসে আবেদ আলী গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নফাঁসে অর্জিত অর্থ তিনি আল্লাহ রাস্তার দান করেছেন। ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে দান-সহযোগিতা, ধর্মীয় কাজ কুরবানি, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, জনসাধারণের জন্য রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণ কোনোটিই বৈধ নয়। আর এতে সাওয়াবও মিলবে না।
কেননা দান-সহযোগিতা, সমাজ সংস্কারসহ জনকল্যাণমূলক কাজ কোনো ব্যক্তির জন্য আবশ্যক নয়। আর ধোঁকা বা প্রতারণা ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ।
প্রতারণা রাষ্ট্রীয় আইনেও জঘন্য অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় প্রতারণার সংজ্ঞা ও ৪২০ ধারায় এ অপরাধের শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে। যা সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও একই আইনের ৪০৬, ৪০৮ এবং ৪০৯ ধারায় বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধের শাস্তির কথা বর্ণিত আছে। দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাটি বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের সিডিউলভূক্ত। এ অপরাধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।