আমার কেন যেন মনে হয়, চিকিৎসকদের দুর্নীতিবাজ করে গড়ে তোলার ইন্ধন চিকিৎসকদের পাঠ্যক্রমের মধ্যেই দেওয়া আছে!!
মানে এই যে কতিপয় চিকিৎসকের নামে অভিযোগ ওঠে তারা ম্যালপ্র্যাকটিস করেন, কমিশন বাণিজ্য করেন, ঔষধ কোম্পানির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেন, সম্ভবতঃ এসব কিছু করতে চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করে বিদ্যমান সিস্টেম।
ইন্টার্নি শেষ করে এফসিপিএস পার্ট ১ পরীক্ষা দিতে ১১,০০০ টাকা প্রয়োজন। রেসিডেন্সি কোর্সে শুধু ভর্তি হতে ইন্সটিটিউট ও কোর্স বিবেচনায় গড়ে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা প্রয়োজন।
আবার একবারেই এসব কোর্সে চান্স পাওয়া যায় না। বার বার পরীক্ষা দিতে হয়। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা করতে হয়।
শুধু ঢুকতেই যদি ৫০,০০০ টাকা খরচ হয়, আনুষাঙ্গিক খরচ কতো দাঁড়ায়? বই-খাতা, গাড়ি ভাড়া, ঐ ইন্সটিটিউটের আশেপাশে বাসা ভাড়া, টার্মে টার্মে পরীক্ষার ফিস এসব খরচ একেবারে ছোট না।
পড়াশোনার কথা বাদ দিলাম, সদ্য ইন্টার্নি পাশ করা একজন চিকিৎসক এই টাকাগুলো কোথায় পাবেন? চিকিৎসক হবার পরও কী সে পরিবার থেকে টাকা নেবে?
কোর্সে থাকাকালীন চেম্বার প্র্যাকটিস করা অবৈধ, এই অবস্থায় একজন চিকিৎসক সংসার চালাবেন কীভাবে? বাবা-মা কে খাওয়াবেন কিভাবে? স্ত্রী-সন্তানের ভরণ পোষণ কিভাবে করবেন?
রাষ্ট্র কি কখনো এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে?
একজন চিকিৎসককে বিশেষজ্ঞ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। একজন চিকিৎসক 'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক' হয়ে উঠলে যতোটা সে নিজে উপকৃত হবে, তার থেকে কয়েকগুণ বেশি উপকৃত হবে একটি রাষ্ট্র, একটি সমাজ, একটি জনপদ।
তাহলে একজন চিকিৎসকের স্নাতকোত্তর পড়াশোনার দায় কেন শুধু ঐ চিকিৎসকের? কেন একজন চিকিৎসকের স্নাতকোত্তর পড়াশোনা ‘সম্পূর্ণ বিনামূল্যে’ হবে না?
বাংলাদেশের সকল চিকিৎসক তো স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করছেন না। ভর্তি পরীক্ষায় যারা যুদ্ধ করে জয়ী হচ্ছেন, শুধু তারাই তো সুযোগ পাচ্ছেন। তাহলে কেন এই অর্থদণ্ড? বিশেষজ্ঞ হতে চাওয়া কি একজন চিকিৎসকের অপরাধ?
ইন্টার্নি একজন চিকিৎসক একজন পুরো দস্তুর চিকিৎসক। একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো টারশিয়ারি স্থাপনায় জরুরি বিভাগ, কিছু আউটডোরে, ইনডোর এবং ওপিডি ওটিতে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে কেন তারা ১৫,০০০ 'ভাতা' পাবেন? দৈনিক ৫০০ টাকা ভাতায় কাজ করেন এই শহরের কোন পেশাজীবী?
রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে, এই মহান পেশায় যারা কাজ করেন, তাদেরও পাকস্থলী আছে, স্ত্রী-সন্তান আছে, বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন এবং অসুখ-বিসুখ-দুর্যোগ আছে। রাষ্ট্র যেন জেনেশুনে তার মেধাবী একজন সন্তানকে 'অসহায়ত্ব' কিংবা 'অনৈতিকতা'র পথে যেতে অনুপ্রাণিত না করে।
লেখক: ডা. রাজীব দে সরকার, সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও কলামিস্ট।