অধিভুক্ত মুক্তি ও স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির বিপক্ষে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একইসাথে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
একই সঙ্গে দাবি আদায়ে আগামী দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা বলেন, আগামী রবিবার (৩ নভেম্বর) ও সোমবার (৪ নভেম্বর) সাত কলেজের অভ্যন্তরীণ সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেবে না। একইসঙ্গে সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাসে দাবির পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। বিগতদিনে আমরা রাস্তায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এসেছি, দাবি আদায় না হলে আমরা আর কঠোর কর্মসূচি দেব।
শনিবার (০২ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা কলেজ ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এক সংবাদ সন্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে এসব জানান সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা।
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি বলেন, আমরা সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের দাবির আন্দোলনে রয়েছি। আমরা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছি। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তারা আমাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু করেছেন।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নেন। আমরা সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা সম্পর্কে তাদের সামনে তুলে ধরি। তারা আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আমরা ধারাবাহিকভাবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের দাবি ও আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরছি। সর্বমহলে আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে সমর্থন পেয়েছি।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার সাথে আমরা সাক্ষাৎ করি। সভায় দুই উপদেষ্টা আমাদের দাবি ও আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চান। এরপর তারা আমাদের সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরে পৃথক প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু আমরা চেয়েছি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। তাই ওই আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। পরে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ সভা শেষ হয়।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে সভা শেষ হওয়ার একই সময়ে মধ্যে আমরা খবর পেয়েছি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকছে। তবে তাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে তাদের বিষয়টা আলাদাভাবে দেখা হবে।
তিনি বলেছেন, সাত কলেজের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে সাত কলেজের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। তাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ আলাদাভাবে করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বস্তুত শিক্ষার্থীদের সাথে উপদেষ্টাদের বৈঠকে সাত কলেজের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রেস সচিবের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রেস সচিব আরও বলেছেন, 'সাত কলেজের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রার থাকবে, ডেডিকেটেড কর্মকর্তা থাকবে। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে কথা বলে করা হবে।' আমরা শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে এমন যেকোনো ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির বিপক্ষে।
সাত কলেজ নিয়ে ভেতরে ভেতরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঢাবি শিক্ষার্থীরা কেউই এখন আর এ অধিভুক্তি চাচ্ছেন না। আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে রয়েছি। এর মধ্যে আমরা শুনতে পাচ্ছি, হঠাৎ করে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে দিয়ে সাত কলেজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার দুরভিসন্ধি হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করে দেবে। অধিভুক্তি বাতিল করার আগে অবশ্যই সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বডি তৈরি করতে হবে। যে সমাধানকে আমরা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের মূল দাবি থেকে সরে আসবো না। সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দাবি, সেটি আমাদের থাকবেই। মন্ত্রণালয় সাত কলেজ বিষয়ে যে কমিটি করেছে, সে কমিটি সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। দ্রুত সময়ে মধ্যে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করতে হবে।
এসময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানান তিনি।