শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগসহ অনাকাঙ্ক্ষিত হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে এবং দেশব্যাপী নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবেধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ।
বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
রাষ্ট্রের কাছে শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো- ‘সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার, ঘুষ ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে আনার জন্য শক্ত পদক্ষেপ, কোটা আন্দোলনে কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত না থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দেশব্যাপী নৈরাজ্য অগ্নিসন্ত্রাস এবং ধ্বংসমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা’।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তাদের দাবিগুলো হলো- ‘ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছাত্র, শিক্ষক, কমকর্তা, কর্মচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলে নিয়ম অনুযায়ী মেধা এবং জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত এবং বৈধ শিক্ষার্থী ব্যতীত কেউ আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবে না, কোটা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কোনো শিক্ষার্থী আইনি বা অন্য কোনো মাধ্যমে হেনস্তার স্বীকার যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ সংগঠনটির নামই ব্যাখ্যা করে আমরা কোন পক্ষের লোক। আমরা গত ১৫ দিন বা তার বেশি সময় বাংলাদেশে যেসকল ঘটনা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শান্তি কামনা, যারা হতাহত হয়েছে বিষয়টিকে সরকারের দৃষ্টিগোচর করার জন্য এবং যে সমস্ত ভ্যান্ডালিজম হয়েছে, বিল্ডিং পোড়ানো, হত্যাকাণ্ডসহ নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।
পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাবরিনা নাজ বলেন, এই জুলাই মাসের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমি কামনা করি না। এভাবে হত্যা, প্রাণ ঝরে যাওয়া কখনই কাম্য না। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনে এটা একদমই কাম্য না। আমরা দেখেছি ১৩ জুলাই থেকে প্রতিনিয়ত অসংখ্য সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, শিশু মরেছে। কেন হল এই হত্যাকাণ্ড? আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ বলেন, আমাদের কর্মসূচির উদ্দেশ্য কোটা বিরোধী আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো এবং যারা হতাহত হয়েছেন তাদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করা, তাদের ন্যায় সঙ্গত দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা। সরকারে কাছে আমাদের অনুরোধ এই সকল দাবি যেন মেনে নিয়ে কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্রদের ভিতর ঢুকে যারা কুটচালে বিশ্বাসী, যড়যন্ত্রকারী, দেশবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী তারা যেভাবে রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত, রাষ্ট্রকে ধ্বংস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তির আওতায় আনার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।