কেবল তুমি এখানে জন্মেছো বলেই সবাই তোমাকে জীবন বলে ডাকছে।
তোমার যে জীবন আছে, মৃত্যু আছে এই নিয়ে প্রতিনিয়ত তোমাকে অন্ধ বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে তোমার চারদিক। তুমি শুনছো, কাউকে মানছো কিংবা কাউকে মানছো না, তুমি বুঝে না বুঝেই মানছো বা মানছো না। তোমাকে বলা হয়েছে, এই জীবনের ঐ অর্থ, এই অর্থের ঐ জীবন। তুমি শুনে মুগ্ধ হও, ছুটে চলো অর্থ মেলাতে, খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যাও অন্য কোনো অর্থ। তুমি ভাবো, না! জীবনের অর্থ এই না, জীবনের অর্থ ঐ। তুমি দ্বিধায় পড়ো, আবার ছুটে চলো অন্য কোনো অর্থের কাছে!
অথচ তুমি জানোই না যে, জীবনের কোনো অর্থ নেই!
জীবন অর্থের জন্য নয়, জীবন কেবল জীবনের জন্য। তোমার জীবনের মৃত্যুও নেই, ফুরোয় না তোমার শরীরের ক্ষুদ্র আণবিক কণাও, জন্মান্তর হও তুমি। এই জন্মে রক্ত মাংসের জীব হলে, একচাক মগজ পেয়ে বোধ পেলে হাজার খানেক।
পরের জন্মে পেতে পারো জৈষ্ঠ্যের কোনো ফল গাছের বাকলের জীবন,
পেতে পারো পুকুরে ভাসমান শ্যাওলার জীবন,
পেতে পারো শর্ষে খেতের হলুদ ফুলের জীবন,
পরের জন্মে পেতে পারো সামুদ্রিক পোনার জীবন।
এই যে বিচ্ছিন্নভাবে তুমি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছো, মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছো সমস্ত পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর সঙ্গে, তোমার কি খানিকটা হলেও মনে হচ্ছে না এই জীবনের বিশেষ কোনো অর্থ নেই? কেবল এই জন্মে একচাক মগজ পেয়েই তোমার চেতনের এত ছোটাছুটি, জানো কি? অচেতনেই ছুটে চলেছো লক্ষ বছর,
এই লক্ষ বছরই তোমার বয়স।
জীবন গতির জীবন, রূপান্তরের জীবন,
সমুদ্রের মতো দুঃখের জীবন, পাহাড়সম আনন্দের, জীবন অভাবের, টানাপোড়নের, জীবন জীবনের৷
আবার তুমি চাইলে হতেও পারো জীবন দিশারীর মতো একজন ভুল মানুষ, এটা তোমারই জীবন!