এমন এনার্কিস্ট আবহাওয়ায় ভর করে হারিয়ে যাওয়া যৌনতার মিথ

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

মিতা চারবাক | 2023-08-31 07:02:13

পীড়িত

এমন কায়দা করে সূর্য উঠে ব্যক্তিগত ক্যালেন্ডারের পাতায়
সমস্ত ফেব্রুয়ারি উবু হয়ে বসে থাকল মরিয়ম আপার উঠানে।
এখানে ঘুম ভেঙে যায় বিড়ালের ভাতঘুমে। ঘুমের ভিতর ছেড়ে আসি আশশ্যাওড়ার ঝোপ আর কিছু পতঙ্গপ্রিয় ছায়া। একটা পুরোনো সুরে গান বাজছে দূরবর্তী কোথাও...গানের ভিতর গতরাতের বাসি অন্তর্বাসের রঙ ছড়িয়ে পড়ছে।

তালপাতা ঝুনে যাচ্ছে
গ্রীষ্মপীড়িত দুপুর ফুটে আছে বোকা বোকা গলির মোড়ে
সালোকসংশ্লেষণে ব্যতিব্যস্ত ব্যালকনির বাগান

প্রতিবেশির ছাদে মিলিয়ে দেয়া জরির পাড়ের খয়েরী শাড়ি
শীতের আকাল উসকে দেয় আরো

এমন এনার্কিস্ট আবহাওয়ায় ভর করে হারিয়ে যাওয়া যৌনতার মিথ। স্যাঁতসেঁতে আমি... আমার জলের কণায় ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করে...
সমযোজী বন্ধনে। যেখানে ঠায় দাঁড়ানো মহিষেরা স্তব্ধতার প্রতিনিধিত্ব করে।

শীত চলে গেলে আমাকে ভীষণ বেকার আর সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মনে হয়
তোমাকেও ভাবি পরনারীতে

লেট নাইট কিসেস

অনেক পাতার নিচে শীতকাল মনে হয়
দাঁড়িয়ে আছে কেউ জুবুথুবু
পকেটে হাত ভরে রাখে
খুব বাতাস দিলে আঙুল থেকে জল চুইয়ে পড়ে... টুপটাপ

দোলাভোগ আমনধানের ঘ্রাণ নিয়ে আসা রাত
শেষ রাতের বাস
তাকে ‘চাতাল’ নামে ডাকা যায় কখনো সখনো
আরো বেশি ইল্যুশনে ঢুকে পড়ে তাহিতির ‘বিচ হাউজ’
যেনবা ডাইমেনশন ভেঙে ব্যাকলাইটের আলোয় পড়ে থাকা নুড়িপাথর ঝলকায়

বাড়িতে ফাঁকা মাঠ
কেউ কেউ তো থাকে বেখেয়ালে অপেক্ষায়
উলের সুতোয় মাফলারের সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে

মায়ের প্রার্থনায় লাল হয়ে আছে সন্ধ্যার ঊনদৃশ্য

এত অবসন্ন আমি... পূর্বপুরুষের ছায়া নিয়ে বসে আছি। অগ্রহায়ণ কবে আসবে? তখন যদি পাহাড় যেতে ইচ্ছা করে... ‘ইচ্ছা যদি হয়’ এটা দেখার জন্য আবার যেতে চাই অগ্রহায়ণে। অথচ এও ভাবি, কোনো এক অগ্রহায়ণী সন্ধ্যায় লেবুচার কাপে আমার মৃত্যু হোক, ধূপে ধূলিসাৎ হওয়ার মতো করে।

সারাদিন ‘স্লিপিন পিলো’ শুনেই যাচ্ছি, যদিও বা এখন মধ্য সন্ধ্যা, আর আমার কানে পাখিদের ডানা ঝাপটানো রোগ, বাতাসে গেলেই সেটা বেড়ে যায়... ট্রেনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা যেন!

এই শহর দুপুর নির্জনতায় মাছেদের মনে খুনখারাবি বাড়িয়ে দেয়...

আর আমি রবিবারকেও সোমবার ভাবি
তবু কোনো ভুল নয় যেনবা
এত এত তুতফলের চক্রান্ত
বাড়ি ফেরার উল্টোপথে হেঁটে যাই
যেদিকে পুরোনো সিনেমাঘরে কবেকার ইতঃস্তত টিকিট ছড়ানো ছিটানো।

ক্যামোফ্লাজ

নেভিগেটরে চোখ রেখে কেউ কেউ ফিরে যাওয়ার বাহানা করছে ধানপাতার প্রতিশ্রুতিতে। কুয়াশায় ডুবে আছে বি-ব্লক রেসিন্ডেন্সিয়াল এলাকা। সকালবেলাটা এত ঘুম নিঝঝুম... তবুও আমাদের যেতে হলো। কুয়াশা জুম-ইন করতে করতে যত নৈকট্যে যাচ্ছি ততই ঝাপসা। ভিডিও গেম থেকে ছিটকে আসা কিছু আন্তরিক রোদ প্রিয় বন্ধুর কাছাকাছি।
মানে ওইদিকে ঝিঁঝিঁপোকাদের পুনরুত্থান, হারিকেন ঘোর।

এসব দিন, এসব রাত আটকে থাকা কবেকার জ্যামিতি বক্সের ভিতর মাঝামাঝি নভেম্বর যাপন... জবাফুলের জানালায় বসে দুলে দুলে পড়া মুখস্থের দিন।
আমাদের হাতে যত হাবজাব কাজ
ভিতরবাড়িতে অদলবদল বারান্দা
বুকের বা পাশটায় আহত পাখি... ব্যথা চিনচিন
এভাবে আর যত বীজমন্ত্র জীবন,
একেকজন নিহিলিস্ট আচরণ
তারও ভিতরে মশলা অধ্যুষিত মফঃস্বলের ঝাঁঝ।

আমরা ফিরে যাচ্ছি...
গংঙাচরা থেকে পশ্চিয়া বাতাস আসছে ঘাঘটব্রিজ পেরিয়ে
বাঁশপাতার বাঁশি বাজাচ্ছে কেউ কারাম উৎসবে।

উপদৃশ্য

আঠার মিনিট আগে সূর্য ডুবে গেছে
মসজিদের মিনারে শেষ রোদ ছুঁয়ে যাওয়া আবেশ
বাষ্পায়ন মন্ত্রে তারাও কিছুটা জন্ম শিখুক

তখনও সন্ধ্যা নয়
তখনও জানালায় ভিড় করে দাঁড়ায়নি
মেহগনি পাতার শুশ্রূষা
এমন মৃদু বাতাস মন্দ সুরে ধোঁয়া ওঠা পবিত্র রান্নাঘর
যেমনটা মরিয়ম আপার জায়নামাজে তেজপাতার ঘ্রাণ

আমাদের অভিমান করার মতো আর যা কিছু বাকি এই দরাজ বৃষ্টিবেলায়
তার কিছুটা সিঁড়িঘরে হারিয়ে ফেলা যৌনবোধে আক্রান্ত
সেসব জুলাইয়ের কোনো কোনো বিকেলবেলা হয়তো আমি রাস্তায় হাঁটি
এই রাস্তায় শহর শেষ গোরস্থান...
ওই দিকেই আবাদী জমি, অপার ঘুমবড়ি
‘কোন পথে বাড়ি ফিরতে চাই?’
(এমন অহেতুক প্রশ্ন প্রতিনিয়ত গিলে খায়না আর)
আমি শুধু শুধু গির্জার ঘণ্টায় মৃত্যুদৃশ্য কল্পনা করতে করতে ঘুমাই
নানীমায়ের শাড়িতে বোনা বেগুনি পাড়ের কাঁথায়
সেলাইয়ের ভাঁজে ভাঁজে পড়ে থাকে
সমুদ্র দূরবর্তী কোনো নাবিকের দিনলিপি থেকে উঠে আসা নির্জনতম অক্ষর

সন্ধ্যার কফিশপে

পৃথিবী এর মধ্যে কয়েকবার ঘুরে এসেছে
যাবতীয় প্রামাণ্য চিত্র ঘুরে গেছে
এখানে বসে ছিল যারা
আর বসে ছিল না যারা
তারা উঠে অন্য কোনো দৃশ্যে ঢুকে গেছে
আমাদের যা কিছু বিস্মরণের তর্জমায়
রঙচটা দুরবিনের নামে
জন্মদাগের নির্লিপ্ততায় সব ফিরে যাচ্ছে
কখনো না গাওয়া গানের সুর হয়ে

কাছিমের চোখ থেকে নিখোঁজ হওয়া একটা সন্ধ্যা
এখানে এসে বসে আছে... পার্পল অন্ধকারে

কফিশপের তরলতায় ভাসছে
শেষরাতের সেক্সটয়ের মুখ থেকে ঝরে পড়া মেলানকলিয়া।

প্রত্নইশারা

আরো একটা ফালতু শুক্রবারকে পাশ কাটিয়ে
আমরা মাড়াই উৎসবে যাচ্ছি।
একটা থতমত বনের ভিতর দিয়ে... শহরের ম্যাপে যার চিহ্ন মুছে দেয়া হয়েছে। শীতার্ত চশমায় কুয়াশার ভার ঠেলে আমরা দ্রুত পা চালাই, অনেক আগেই হাইওয়ের ওপর সন্ধ্যা নেমেছিল ধীরে।
আর আমরা কিছুটা গভীরের দিকে...
ভাবো, পৃথিবী শুরুর পর, এখানে আজ প্রথম মানুষের পা পড়ল, দেখো কেমন অশ্লীল পদচারণা! আর ওই যে আলোটা... পৌরাণিক ফার্ন ঝোপে আটকে পড়েছে... ছাব্বিশ আলোকবর্ষ দূরের কোনো নক্ষত্র থেকে ছিটকে এসে থাকব, আর এখন শ্বেত বামনে পরিণত হয়েছে বোধহয়। (আসো, নতজানু হও, তার জন্য খানিক প্রার্থনা করা যাক)

আমরা
গড়িয়ে
নামছি
পতনের
শেষ বিন্দুবিসর্গে
নক্ষত্রের কথাবলাবলি শেষ হওয়ার আগেই আমাদের পৌঁছুতে হবে।

গভীর এ অরণ্য কিছুটা বেসামাল করে দেয় (তার সেই ক্ষমতা আছে)... কিছু সময়ের জন্য ম্যারিনেট করা বনমোরগের গন্ধ ভুলে যেতে যেতে... আমাদের আচরণ ঘন হয়ে উঠে, বিব্রত মাথার ভিতর ডুবুরী যেন পানিফল খুঁজে বেড়ায়।
কৃষ্ণজর্জর চাঁদের আলোয় স্তব্ধতার সব কটা জানালা খুলে গেছে। ভোর হওয়ার আগেই আমরা অন্য কোনো ভৌগলিক আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে যাব... তখনও মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ঘুম লেপ্টে থাকবে।

আলো ফুটছে
বারানই নদীর পাড়ে মারান্ডি যুবকের ছায়া ঝাপসা হচ্ছে...

এ সম্পর্কিত আরও খবর