শঙ্কার ভিন্ন মাত্রা
অনিশ্চিত সময় অতিক্রম করছি আমরা—
পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে শঙ্কা।
আমরা জানি মৃত্যুর সাথে অবস্থান করি আমরা,
জানি অস্তিত্বের সীমানা সঙ্গায়নে আমরা অপারগ,
এও জানি মৃত্যু নিয়ে শঙ্কা সম্ভবত নিষ্ফল।
তথাপি এই শঙ্কা এক অন্যরকম শঙ্কা,
এর অপরিচিত অবয়ব সৃষ্টি করেছে শঙ্কার ভিন্ন মাত্রা।
সরীসৃপ, বাঁদুড়ের জিন ফিউশনের সম্ভাব্য সৃষ্টি এই শঙ্কা
বিস্তার করেছে তার প্রভাব শহর জনপদ সর্বত্র;
সতর্কতা সম্প্রচারে সড়ক অন্যান্য স্থান হচ্ছে সুনশান—
নাগরিকবৃন্দ স্বেচ্ছায় অন্তরিন নিজ নিজ গৃহে,
অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপে রূপান্তরিত হয়েছি আমরা।
শঙ্কা থেকে উদ্ভূত হয়েছে এক প্রশ্নবোধক সংশয়—
অচেনা হয়ে যাচ্ছে পরিচিত পরিমণ্ডল;
সংশয়ের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে আমাদের মানসিকতায়—
অনিবার্য বিচ্ছিন্নতায় আচ্ছন্ন হচ্ছি আমরা।
শঙ্কার শিকড় প্রবেশ করেছে চেতন অবচেতনের গভীরে,
লক্ষ্যহীনতা দৃশ্যমান আমাদের সাম্প্রতিক আচরণে—
তথ্যের পাশাপাশি প্রবহমান তথ্যের বিভ্রাট—
সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কার নানাবিধ নবতর মাত্রা।
আরো আলো চাই ভুবনে, আরো আয়োজন চাই,
শঙ্কা নিয়ে শঙ্কা নয়—সীমাবদ্ধতা নয়,
নিঃশঙ্ক চিত্তে মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকাতে চাই,
তোমার হাত ধরে অনেক দূর চলতে চাই।
করোনা রাত
এক অন্যরকম পঁচিশের রাত হয়ে আসে
রক্ত গুটিকার মতো করোনা রাত;
অতর্কিতে অবতরণ করে বিস্তীর্ণ চরাচরে
নিশ্চিন্ত অপ্রস্তুত মানুষের ওপরে।
করোনা তার পিপাসু প্রবণতা প্রসারিত করেছে
এক গোলার্ধ থেকে অন্য গোলার্ধে;
অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে মানুষের বিরুদ্ধে,
সেডিস্টিক উল্লাসে মেতে উঠেছে করোনা।
না, করোনা কর্ডেলিয়া নয়, ন্যায়বাদী শাহজাদি নয়;
বরং লেডি ম্যাকবেথের মতো বিকৃত মানসিকতায়
নির্মম মৃত্যুর সবরকম আয়োজন সে করে—
কিংবা নাটকের ডাইনিত্রয়ের মতো
অশুভ, অন্ধকার, বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে আসে—
আয়োনেস্কোর ‘ঘাতক’-এর মতো যুক্তিহীন হয়।
অন্যরকম রাত হয়ে এসেছে করোনা,
সে রাতের সাথে চলছে মানুষের লড়াই;
চিরকাল চলে লড়াই—উদ্বর্তনের লড়াই—
কালো রাত এক সময় অতিক্রান্ত হয়—
অরুণোদয়ে উদ্ভাসিত হয় তমসাবৃত অধ্যায়—
এ লড়াইয়ের কোনো পরিসমাপ্তি নেই,
অমানিশা ফিরে আসে ভিন্ন ভিন্ন রূপে এবং
আলোর জন্য অব্যাহত থাকে অন্তহীন লড়াই।