২৩ বছর বয়সে লেখা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

কাজল শাহনেওয়াজ | 2023-08-30 21:09:37

৮/৮/১৯৮৪

ওর সাথে দেখা না হলে মনে হয় আমার লজিক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চামেলীর সুগন্ধ নিলাম, কেমন মায়া লাগল এই ফুলটাকে। থুজা, অরোকেরিয়া, ঝাউ, দুরন্ত, দোপাটি… সবকিছুর সঙ্গ দেবার গুন।

আমার ঘরের কাছে সাদা চেরি ফুলের গাছ। শে একটা সাদা চেরির চারা চেয়েছিল। চ এর কাছে তাকে পাঠালে কেমন হয় ভেবে মাঝরাতে ঘুম আসে না। আমার শুধু শূন্যতা। কতদিন তার সাথে দেখা হয় না।
যদি সহজ চিহ্নের একটা সুখ খুঁজে পাও তো ধরে ফেলো।

মেয়েটার জন্য ভাবি। কত সহজে শে ভালো থাকতে পারত। কিন্তু নিজে নিজে কষ্ট পায়। অত্যন্ত সহজ আবেগের মেয়ে। কিন্তু দূরন্ত প্রেমের পিছনে ছোটে। ধরতে পারে না। ওর জন্য কিছু করতে পারছি না।

৯/৮/১৯৮৪

পার্কের ওপাড়ে ভজহরি থাকে। সে স্টিক বেচে। নদী পার হয়ে তার কাছে যেতে হয়।

ঢেউ দোদুল দুল। ব্রহ্মপুত্রের চরে থাকে সে।
খেয়ানৌকায় পাড়াপাড়। পকেটে দুটা স্টিক। পিছনে রেখে এলাম সাক্ষী শিমুল।

নৌকায় ঢেউ। আমি কোথায় দুলছি? তোমাতে না আমাতে?
আধো উদলা রমণী ঝাপিয়ে পড়ল নদীতে,
সাঁতার কাটতে থাকল স্রোতে ভেসে।
একা নারী, কি তার সাহস।

খালি ঘর পাহারা দেয় ভজহরি।
আর পুরান কিচ্ছা কয়।
আর তিলের খেতে কালো ফুল তোলে।
বন্যায় ঘর ভেসে গেছে।
শ্বশুর বাড়িতে হাঁটু মুড়ে ভজহরির পাশে বসে আমসত্ব বালিশে দুটা স্টিকের হেলান।
বেড়ায় মহাদেব আরেক বেড়ায় টাঙানো
মা ও ছেলের ছবিকে শাসন করে।
দুনিয়া টলে ওঠে বিকাল বেলায় কিছুটা কাত হয়ে ঝিংগা ঢেড়শের আরেক বছর।

২২/৮/১৯৮৪

সারি সারি উজ্জ্বল মেহগনি পাড়ায় পাতা ঝরে পড়ে। ভাবি তোমার কথা

একদিন এইসব গাছে ভালো টেবিল চেয়ার খাট হবে
ডাবল বিছানায় তোমাকে নিয়ে যখন গড়াগড়ি খাব
তখন কি এই ভীরু পাতাদের অলস মর্মরে আমাদের জেগে ওঠা
মনে হবে? মনে হবে?

সারি সারি রঙিন মেঘের ভিতর দিয়ে আমরা একদিন হেঁটে গিয়েছিলাম

২৩/৮/১৯৮৪

যেন ঘরের ওপর এসে সব কিছু জমা হয়েছে

আমরা কেউ হয়েছি ঝুঁকে পড়া ডাল
কেউ লম্বা নিঃসঙ্গ কাতর বারান্দা, আর এই বারান্দার
শেষ প্রান্তে কেউ টবে ফুটে আছি চাঁপা

পাহাড় থেকে ঘুরে এসে মুরং যুবতীর
কথা বলতে আমাদের প্রশান্তির সীমা নাই
কিভাবে ফুটেছে লালমনির হাটে ফুল
আমার আকাঙ্ক্ষা জানে সেই সব
ঘরের ওপর এসে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে

বিলোল কটাক্ষ হেনে দোপাটি ফুটেছে
সারাদিন বাইরে থেকে নিজেই পামোজা খুলেছে কিভাবে মনে নাই
ক্লান্তি এসে বসে থাকে

তোমাকে যা দিয়েছি আজ, কালও যা দিয়েছিলাম
সব যত্ন করে রেখে দিয়ো
একদিন খুলে দেখব নিশ্চিত।

২৩/৮/১৯৮৪

এগিয়ে দিতে গিয়ে আর ফিরে আসতে মন চাইছিল না

মেয়েটি অন্ধকারের মোমে সলতার মতো জ্বলছিল
আমি নিজে ছিলাম বাতাসের মতো নিরাপদ,
আমার রক্তে কবিতা আগমনের সকল প্রস্তুতি শেষ করে

প্রথমে কার্পাস ফুটেছে
কার্পাসের কাছে মুখ নিতেই ঘামের নোনা গন্ধ,
কিছুদিন গোসল না করা আঁশ আঁশ স্বাদ
দুপাটি দাঁত কুমিরের।
চোয়াল ফাঁটিয়ে কার্পাস ঢুকে গেল বোঁটা নিয়ে।
বোঁটা, কালো আঙুর!
আঙ্গুলের মাথায় সমস্ত স্নায়ু জড়ো করেছে
কার্পাসের নির্বস্ত্র গা থেকে হিরা জহরতের
দুর্মূল্য সামগ্রী খুলে দেখি, পাশে রাস্তার ফাটলে
আয়নার মতো পানি
সেখানে স্বর্গের তারার ছবি ফুটেছে।

ফুটা স্বর্গ! ফুটা গোলগাল মেয়েটা।
খিল খিল করে বিবস্ত্র হাসিতে নাচছে।

আকুল পাকুল হাওয়া এসে আমাকে
টেনে নেয় অন্ধকারে
প্রতিটি কোনে কার্পাস ফল
মুখে তুলে নিতে মনে হলো
দুধ খাচ্ছি কিশোরী মায়ের স্তনে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর