রাজধানী ঢাকায় বসবাস না করেও তিনি বাংলাদেশের সত্তর দশকের কবিতার অন্যতম উজ্জ্বল মুখ। চট্টগ্রামের কবি ও সাংবাদিক স্বপন দত্ত প্রৌঢ়ত্বের প্রান্তসীমায় এসে প্রকাশ করেছেন 'নির্বাচিত কবিতা'।
খড়িমাটি থেকে প্রকাশিত 'নির্বাচিত কবিতা' গ্রন্থে স্বপন দত্তের এ যাবতকালে প্রকাশিত সাতটি গ্রন্থ থেকে বাছাই করা কবিতাগুলো স্থান পেয়েছে। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে স্বপ্নের বসতবাটি ও অন্তর্লীন চাষ-আবাদ (১৯৮০), কুরুক্ষেত্রের কালোপ্রহরে অমৃত সমান বৃষ্টিপাত (১৯৯৬), পান করি জতুগৃহে অনন্ত যৌবন(১৯৯৬), জেগে আছি ভালোবাসা একুশ বছর (১৯৯৭), রূপসাগরে পর্যটন কায়া করতালি (১৯৯৯), পাকদণ্ডী পেরুলেই শিহরিত সূর্যোদয় (২০০৭), নীলকণ্ঠ বাংলাদেশ নূহের তরণী (২০১৪)।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার গৈড়লা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী কবি স্বপন দত্তের উত্থান লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরে। নিভৃতচারী এই কবির প্রিয় আশ্রয় ছোট কাগজ, যেখানে তার কবিজন্ম ও বিস্তার।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সঙ্কুল পরিস্থিতিতে কবিতাকে হাতিয়ার করে শিল্প-আন্দোলনে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামের এস্টাবলিশমেন্ট বিরোধী সাহিত্য গ্রুপ 'স্পার্ক জেনারেশন'-এর সামনের কাতারে থেকে এই কবি প্রতিবাদী সাহিত্যবোধে জারিত করেছিলেন তরুণ প্রজন্মকে।
ব্যক্তি সচেতনা ও রাজনৈতিক প্রাখর্য তার কবিতার অন্তর্নিহিত সম্পদ। আবেগ ও শব্দের অর্থহীন চর্চার বিপরীতে কবিতাকে মানবিক মননের শাণিত সঙ্গীতের মতো উচ্চারণ করেছেন তিনি। কবিতার বাক্যবাণে আঘাত করেছেন অসঙ্গতি ও অচলায়তনে। কখনো আমুণ্ডু স্পর্শ করেছেন স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ।
কবি স্বপন দত্তের 'নির্বাচিত কবিতা' প্রকৃত কাব্যবোদ্ধাদের নান্দনিক তৃষ্ণায় শীতল জলের পরশ বুলিয়ে দেয়। প্রগাঢ় উচ্চারণে বলে:
'আমি আজও প্রতিদিন পিপাসিত সূর্যোদয় দেখি
ছাদে গেলে শৈশবের ঘুমভাঙা নদী
এখন আমার কাছে কলতলা
হারানো সে নগরীর প্রিয় প্রতিনিধি।'
(লস্ট আটলান্টিস)