তুষার আবদুল্লাহ, একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও উপস্থাপক। দেশজুড়ে লেখক হিসেবে তার রয়েছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। কখনও শিশু-কিশোরদের জন্য সাহিত্য নিয়ে আসেন, কখনওবা রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে প্রবন্ধ।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার শিশুপ্রহরে শিশু চত্বরে জনপ্রিয় এই লেখক ও টিভি সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় বার্তা২৪.কম-এর। তার সঙ্গে এই আলাপচারিতায় উঠে আসে শিশু ও কিশোর সাহিত্যের বর্তমান চালচিত্র।
তুষার আবদুল্লাহ: শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত মানসন্মত বই নেই। বিশেষ করে বই মেলার শিশু চত্বরে যেসব প্রকাশনীর শিশুতোষ বই আছে সেগুলোর মধ্যে থেকে চার-পাঁচটি প্রকাশনার বই অভিভাবকগণ বাচ্চাদের হাতে তুলে দিতে পারবেন। কিন্তু বাকি প্রকাশনা সংস্থার বইগুলোর মান নেই। অন্যদিকে দেশের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী কিছু প্রকাশনা সংস্থা আছে যারা কিছু মানসন্মত শিশুতোষ বই প্রকাশ করেছে কিন্তু সেগুলোর প্রকাশনা স্টল শিশু চত্বরে নেই। আবার বাচ্চাদের অভিভাবকগণ জানেন না এইসব স্টল কোথায় আছে এবং কোথায় গেলে পাবেন। এই জন্য মানসন্মত বই থাকলেও সেগুলো শিশুদের হাতে পৌঁছুতে পারছে না।
তুষার আবদুল্লাহ: শিশু চত্বরে শিশুদের জন্য সিসিমপুরসহ বেশ কিছু আয়োজন আছে। সেখানে শিশুরা খেলাধুলা করছে। এখন তো আমরা শিশুদের নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে গেলে সেখানে ‘গেম জোন’ আছে কিনা সেটা লক্ষ্য করি। কিন্ত মেলায় আসা শিশুদের প্রধান আকর্ষণ যদি হয় খেলাধুলা সেক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগতভাবে আপত্তি আছে। অভিভাবকদের সাথে আসা বাচ্চারা বইয়ের সাথে থাকুক, বই দেখুক। বই মেলায় এসে বাচ্চারা শুধু লম্ফঝম্প কেন করবে? তবে, নালন্দার আয়োজনে বাচ্চাদের হাতের লেখা ও তৈরি করা বইয়ের প্রদর্শনী দেখছি। সেখানে বাচ্চা ও অভিভাবকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। বিষয়টা ভালো এবং এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই।
তুষার আবদুল্লাহ: শিশু সাহিত্যও আসলে সাহিত্য। এখন যারা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত লেখক, গুরুত্বপূর্ণ লেখক বা ভালো লেখেন তারা জনপ্রিয় ধারায় চলে যাচ্ছেন। একজন লেখক হিসেবে আমি জনপ্রিয় ধারায় যাবো নাকি আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু লিখে যাবো, কিছু বিনিয়োগ করে যাবো-সেই ব্যাপারে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। লেখক হিসেবে শিশুদের জন্য নিজের কর্তব্যের জায়গা থেকে সরে গেছেন সবাই। এখন আমাদের আবার শিশুদের জন্য লেখায় ফেরা উচিত, শিশুদের কথা শোনা উচিত। আমরা অনেকেই শিশুদের জন্য লিখি কিন্তু শিশুদের সাথে কথা বলি না। এ কারণে শিশুদের বইয়ে তারা কি চায় সেটা আমরা বুঝি না। শিশুরা যা চায় সেগুলো শিশুতোষ বইয়ে তারা পাচ্ছে না। বইতে আমরা যা চাই সেগুলো তোমরা লিখছো না-এমন কথাও এখন শিশুরা বলছে। এ থেকেই বোঝা যায় শিশু সাহিত্য এখন কোন পর্যায়ে আছে।
তুষার আবদুল্লাহ: শিশুতোষ বই বিষয়ক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে চ্যানেলগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারছে না। একসময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে যে ধরণের শিশুতোষ বই বিষয়ক অনুষ্ঠান হতো সেই ধরণের অনুষ্ঠান এখন নেই। শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত চ্যানেল থাকলেও তারা কার্টুন আর ডাবিং করা অনুষ্ঠান দিয়েই দায় সাড়ছে। এক্ষেত্রে আসলে আমরা বাজার ব্যবস্থার কাছে বন্দি। টিভি অনুষ্ঠানগুলো মূলত বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভর। শিশুতোষ অনুষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপনসংস্থা এগিয়ে আসতে আগ্রহী না। একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমারও দায় আছে যেটা আমি এড়িয়ে যেতে পারি না। এমন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেটাও নির্ভর করছে বাজার ব্যবস্থার ওপর।
তুষার আবদুল্লাহ: হাহাহাহা... আমি কিন্তু আমার শিশুকাল কাটিয়েছি দিগন্ত জোড়া সরিষা ক্ষেত দেখে, মটরশুঁটির পাতা থেকে শিশির ঝরতে দেখে। এখন এসব যদি আমি শিশুদের জন্যে লেখা বইয়ে বলতে চাই, তা হবে না। এখন গ্রাম বদলে গেছে, একটা শিশু কী নগরে বাস করে সে নগরটা দেখতে কেমন এগুলাও কিন্তু একটা বই বা কবিতা, ছড়া ও গল্পের বিষয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমি আমার ছোট বেলা যেমন দেখেছি আমার লেখায় তেমনটা শিশুদের বলার চেষ্টা করছি। কিন্তু শিশুরা তো বই পড়ার পরে বাইরের প্রকৃতির সাথে বইয়ে পড়া প্রকৃতি মেলাতে পারে না। লেখক হিসেবে আমি যা দেখেছি এবং পাঠক হিসেবে শিশুরা এখন যা দেখছে দুইটার সংমিশ্রণে আমাদের লেখা উচিত।