বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকেঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা দেশীয় লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের চিরাচরিত এক মিলনমেলা। প্রিয় লেখকের লেখা পড়ে পাঠক-লেখকের যে মানসিক নৈকট্য তৈরি হয় তার পূর্ণতা পায় বইমেলায় আসা লেখক-পাঠকদের সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে। বইমেলাই একমাত্র মাধ্যম যেখানে খুব সহজেই প্রিয় লেখকের সাক্ষাৎ পান পাঠকরা। নির্দিষ্ট প্রকাশনা সংস্থার স্টলে পছন্দের লেখক আসবেন, সেই লেখকের বই কিনে স্টলের সামনে লাইন ধরে পাঠকরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করবেন। সদ্য কেনা ভাঁজ না পরা বইয়ের পাতায় প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফসহ ঘরে ফিরতে চাওয়া নাছোড়বান্দা পাঠকে পূর্ণ থাকবে স্টল। এমনই তো বইমেলার চিরচেনা রূপ। সময়ের আবর্তনে, প্রযুক্তির আধুনিকায়নে অবশ্য পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই। আর এমন পরিবর্তনের অংশ হিসেবে লেখক-পাঠকের এই সম্পর্কটা অটোগ্রাফের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছে সেলফি নামক ফটোগ্রাফ পর্যন্ত।
ইদানিংকালের বইমেলায় অটোগ্রাফ সংগ্রহের এমন দৃশ্য খুব কম চোখে পড়লেও একেবারে বিরল নয়। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বর্ধিত অংশে একটি স্টলের সামনে পছন্দের লেখকের বই কিনে অটোগ্রাফ নিয়ে সেলফি তোলার জন্যে বড় লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে পাঠকদের। বিকেল গড়িয়ে যায় তবুও লেখক আসে না তবে সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে লাইনের দৈর্ঘ্য সঙ্গে অপেক্ষমান পাঠকদের উত্তেজনা।অবশেষে লেখক এলেন এবং একের পর এক বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন সঙ্গে পাঠকের আবদারে হাসি মাখা মুখে একটা সেলফি। পছন্দের লেখকের অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ (সেলফি) পেয়ে তৃপ্তি ভরা অভিব্যক্তি নিয়ে স্টল ত্যাগ করা পাঠকের অনুভূতি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করার মতো না হলেও এমন কিছু পাঠকের সঙ্গে কথা বলে বার্তা২৪.কম জানার চেষ্টা করেছে তাদের অভিব্যক্তি।
প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফসহ বই কিনে একটা সেলফি তোলার খায়েশ নিয়ে প্রথমবারের মতো পাবনা থেকে বইমেলায় এসেছেন অ্যাডওয়ার্ড কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ুয়া রাজীব দত্ত। তার অভিব্যক্তি জানতে চাইলে বলেন, সাদাত হোসাইন ভাইয়ের অটোগ্রাফসহ একটি বই কিনে এবং তার সঙ্গে সেলফি তোলার ইচ্ছে নিয়ে এবারই প্রথম বইমেলায় এসেছি। প্রিয় লেখকের ক্ষণিকের সান্নিধ্য আমাকে আনন্দিত করেছে এর বেশি কিছু এখন বলতে পারছি না।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তানজিনা ইসলাম তন্নি জানান, ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর প্রিয় লেখকের সান্নিধ্য পেয়েছি এবং তার অটোগ্রাফসহ একটি বই কিনে তার সঙ্গে সেলফি তুলেছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রিয় কোনো মানুষের সাক্ষাৎ পেলে যে ভালোলাগা কাজ করে, সেটি বলে বোঝানোর মত নয়। তবে লেখকের লেখা পড়ে তার প্রতি যে মায়া তৈরি হয় সেই মায়া ধরে রাখার জন্য অটোগ্রাফের পাশাপাশি ফটোগ্রাফ তো চাই, চাই।
শুধু পাঠক নয় লেখকরাও লেখকের ভক্ত হন। একজন লেখক সাধারণ পাঠকদের কাতারে দাঁড়িয়ে পছন্দের লেখকের অটোগ্রাফসহ বইও কেনেন। তেমনই এক নবীন লেখক ও সরকারি চাকরিজীবী ফেরদৌসী স্নিগ্ধা জানান, আমি সাদাত ভাইয়ের লেখার একজন পাঠক ও সমালোচক ৷ তার সবগুলো বই আমার পড়া। অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফের ব্যাপারটা কেমন উপভোগ করেন জানতে চাইলে স্নিগ্ধা প্রাণ খোলা এক হাসি শেষে জানালেন, ভার্চুয়ালি তার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও সরাসরি সাক্ষাৎ খুব কম হয়। তাই ভাইয়ের বই কিনে অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ দুইটাই নিতে এসেছি।
অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফের বিষয়টা কেমন উপভোগ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন বলেন, একজন লেখক হিসেবে এটা আমার প্রাপ্তি। অটোগ্রাফসহ বই নেওয়ার জন্য এমন দৃশ্য বই মেলার পুরনো ঐতিহ্য। আর প্রযুক্তির আশীর্বাদে এখন সেলফি মানে যেটাকে আপনি ফটোগ্রাফ বলছেন সেটাও এখন সময়ের দাবি। পাঠকদের সঙ্গে সেলফি তোলার বিষয়টি আমিও দারুন উপভোগ করি।
শনিবার সপ্তম দিনের মতো চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এদিন সরকারি ছুটি থাকায় সকাল ১১টা থেকে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য মেলার গেট খুলে দেওয়া হয়। সারাদিন মেলায় পাঠক-লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ছিলো মেলার দুই প্রাঙ্গণ।